Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:23 pm

ব্র্যাক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মী নিয়ে টানাটানি

নিয়াজ মাহমুদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মী নিয়ে চলছে টানাটানি। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা দলবেঁধে চাকরি ছেড়েছেন এবং যোগ দিয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে।  এদিকে হঠাৎ করে দলবেঁধে কর্মকর্তাদের চাকরি ছেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকপাড়ায়ও গুঞ্জন উঠেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রিটেইল সেবা সম্প্র্রসারণের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮৪ জন কর্মকর্তা নেয়। এ কারণে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, জনগণের আমানতের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১১০ ধারা অনুযায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তারা জনসেবক। তবে ব্যাংকের মধ্যম পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগে কোনো নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় যথাযথ দায়িত্ব পালনে বিঘœ ঘটছে।

ব্যাংক খাত সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে ব্র্যাক ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে দ্ব›দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। ওই সময়ে ব্যাংক ছেড়ে যান ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কয়েকজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, এসএমই বিভাগের প্রধানসহ শীর্ষ ২০ কর্মকর্তা। এরপর বিভিন্ন বিভাগ থেকে কর্মকর্তারা ব্যাংক ছাড়তে শুরু করেন। ব্র্যাক ছেড়ে ডাচ্-বাংলা, প্রাইম ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সে যোগদান করে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা। এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্র্যাক ব্যাংকে যোগদান করেন বলে জানা গেছে। বিগত বছরে এখান থেকে চাকরি ছেড়েছেন বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৮০০ কর্মী।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হুসেইন শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকের কিছু কর্মী অন্যত্র চলে যাওয়া তেমন খারাপ কিছু নয়। একদিক দিয়ে যাবে, অন্যদিক দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে এবং আমরা দিচ্ছিও। সব দেশের সব ব্যাংকেই কর্মী আসা-যাওয়া করছে। আমাদের ব্যাংক থেকে গত বছর প্রায় ৮০০ কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। আবার একই সময়ে প্রায় দুই হাজার দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।বর্তমানে ব্যাংক খাতে দক্ষ জনশক্তির বড় সংকট চলছে বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের শীর্ষ এ নির্বাহী।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে চাকরি পরিবর্তনের ধারা ও অর্থনৈতিক প্রভাব’ শিরোনামের এক গবেষণা করে। এতে উঠে আসে, ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাথমিক পর্যায়ের কর্মকর্তা চাকরি ছাড়েন বেতন ও আনুষঙ্গিক কম সুযোগ-সুবিধার কারণে। এর পাশাপাশি ব্যাংক কর্মক্ষেত্রের চাপ, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, বিকল্প চাকরির ব্যবস্থা ও পদোন্নতি লাভে বাধা চাকরি ছাড়ার অন্যতম কারণ। উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাকরি ছাড়ার পেছনে বেতনের পাশাপাশি উচ্চ পদ ও সামাজিক মর্যাদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘দলবেঁধে কর্মকর্তারা ব্যাংক পরিবতর্ন করছেন, এটা খুব উদ্বেগজনক। এটা পুরো  ব্যাংক খাতের জন্য ভালো বার্তা দেয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে, কেন পরিবর্তন করছে। মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগে একটা নীতিমালা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’