ব্লক মার্কেটে অস্বাভাবিক লেনদেন ভাবাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সম্প্রতি পুঁজিবাজারে লেনদেন তলানিতে নেমে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই লেনদেন হতে দেখা যাচ্ছে ১০০ কোটি টাকার নিচে। কখনও তা নেমে আসছে ৫০ কোটির ঘরে। তবে যে লেনদেন হচ্ছে তার মধ্যে প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই থাকছে ব্লক মার্কেটের লেনদেন, যা অনেকটাই অস্বাভাবিক। করোনার মাঝেও ব্লক মার্কেটে এ অস্বাভাবিক লেনদেন ভাবাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

কোনো চক্র এখান থেকে সুযোগ নিচ্ছে কি না, এমন সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্লক মার্কেটে স্বাভাবিক নিয়মেই লেনদেন হচ্ছে। তবে যেহেতু এই মার্কেটের মাধ্যমে শেয়ারের কৃত্রিম দর বাড়ানো ও চাহিদা সৃষ্টি করা সম্ভব, তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলেও জানান তারা।

সাধারণত ব্লক মার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগগ্রহণ করতে দেখা যায় না। বরং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষই বেশি লেনদেন করে থাকেন এ মার্কেটে। তবে কেউ চাইলে পাঁচ লাখ টাকার ওপরের সমমানের শেয়ার ব্লক মার্কেটে লেনদেন করতে পারেন।

ডিএসইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এই মার্কেটে পরিচালক থেকে শুরু করে সবারই লেনদেন করার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে বিষয়টি অবশ্যই ডিএসইতে জানাতে হবে। এই মার্কেটে কে কার কাছে শেয়ার কেনাবেচা করছেন, সেটা প্রকাশ করা হয় না, যে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এটা জানার সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে তাদের যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে অসংগতি আছে বলে মনে হয়, তবে তাদের সতর্ক থাকাই শ্রেয়। কারণ এখানে সব নিয়ম মেনেই করা হয়।

ব্লক মার্কেটে লেনদেনের আগে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে একটা বোঝাপড়া থাকে। মূলত ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেন হয় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে চুক্তির মাধ্যমে। স্বাভাবিক মার্কেটে বড় ভলিয়মের লেনদেন মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করে। এই কারণেই স্বাভাবিক মার্কেটকে প্রভাব মুক্ত রাখতে ব্লক মার্কেটেকে লেনদেনের ব্যবস্থা করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল মার্কেটের শেয়ারের সঙ্গে এই মার্কেটের শেয়ারদর কম বা বেশি হতে পারে, যে কারণে মূল মার্কেটে যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার চাহিদা না থাকে, তাহলে ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে বড় সেল দেখিয়ে শেয়ারদর বাড়ানোর সুযোগ থাকে। কারণ বিনিয়োগকারীদের কৌতূহল থাকে। যেহেতু ব্লক মার্কেটে শেয়ারদর বাড়ছে, তাই মূল মার্কেটেও এই শেয়ারের দর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটা সব সময় ঠিক হয় না।

যদিও ব্লক লেনদেন হয়েছে মানে বড় কোনো বিনিয়োগকারী ক্রয় করছে, এ ধারণা সত্য নয়। ব্লক লেনদেন করে বড় কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বেরও হয়ে যেতে পারে। যে কেউ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে ব্লক মার্কেটে ট্রেড করতে পারে। অনেক সময় কারসাজি চক্র এ বাজারে নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা করেই কৃত্রিমভাবে দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলতে পারে।

ব্লক মার্কেটে লেনদেন মাঝেমধ্যে বাড়ে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করে। এটা বেশি দেখা যায় জুন মাসে। কারণ আর্থিক বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের আয় বা মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে এ কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। বরাবরই জুন মাসে এই মার্কেটে লেনদেন বেশি দেখা যায়।

এছাড়া কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন করেন। অনেক সময় তারা আইনের শর্ত পূর্ণ করার জন্য শেয়ার ক্রয় করেন। বোনাস বিক্রি করেন। এ কারণেই ব্লকে লেনদেন বাড়ে।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে ডিবিএর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে সময়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এই মার্কেট থেকে বড় ভলিয়মে শেয়ার লেনদেন হতে দেখা যাচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরও আগ্রহী হওয়ার কথা। দুই মার্কেটেই এখন কম দরে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা চাইলে এসব শেয়ার ক্রয় করতে পারেন।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো নয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে সুবিধাবাদীরা মূল মার্কেটে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে তারা ব্লক মার্কেট থেকেও সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। ভালো মানের কোম্পানির শেয়ার ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া স্বাভাবিক হলেও দুর্বল কোম্পানির বেলায় এমন দেখা গেলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ পুঁজিবাজারে দুষ্টচক্রের অভাব নেই।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে মোট ৬৯ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে ৩৮ কোটি টাকার লেনদেন হয় ব্লক মার্কেটে। এর আগের দিন ১৭ জুন ব্লক মার্কেটে লেনদেন ছিল ৫৬ কোটি টাকা, ১৬ জুন ২৯ কোটি টাকা, ১৫ জুন ১৪ কোটি টাকা ও ১৪ জুন সাত কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহেও ব্লক মার্কেটে ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০