বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘট

শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী ধর্মঘট শুরু করে।
আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, দীর্ঘ ৯ মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হলেও, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে ও সমঝোতার কথা বলে তালবাহনা করে সময় পার করছে। এখন তাদের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নাই, এ কারণে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের ঘোষিত ১৩ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
এদিকে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে খনিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও চিকিৎসক ছাড়া, কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারেনি ও খনির কর্মকর্তারাও খনি থেকে বের হতে পারেননি। শ্রমিকরা দাবি করছেন, খনিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে শ্রমিক ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে খনি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তবে কোন ঘটনা ঘটেনি।
বড়পুকুরিয়া শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আউট সোসিং শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ প্রদান, বকেয়া ৯ মাসের বেতন-ভাতা প্রদান, প্রফিট বোনাস, ফেস বোনাসসহ বিভিন্ন ভাতা প্রদানসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য দির্ঘ ৯ মাস থেকে কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ অনুরোধ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেনি। এ কারণে গত এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের আলটিমেটাম ঘোষণা করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান জানান, শ্রমিকরা চুক্তি অনুযায়ী সব শ্রমিকদের নিয়োগ প্রদান, প্রতি বছর শতকরা ৪০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, সব শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গ্রাচুইটি প্রদান, আন্ডারগ্রাউন্ড শ্রমিকদের ছয় ঘণ্টা ডিউটি করানো, ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি গ্রামের বাড়িঘরের দ্রুত স্থায়ী সমাধান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকরি প্রদান, এলাকার নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খনিতে কর্মরত শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে।
এছাড়া গত বছরের আগস্ট থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির এক্সএমসি/সিএমসির শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভুগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে ২০টি গ্রামের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। এ কারণে তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন।
খনির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সম্বনয় কমিটির আহ্বায়ক মশিউর রহমান বুলবুল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারছে না। তাদের যাতায়াতের রাস্তাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোন কর্ণপাত করছে না, এখন আন্দোলনের বিকল্প কোনো পথ এলাকাবাসীর নাই।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালন (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন জানান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায়, শ্রমিকদের কাছে সময় চাওয়া হয় কিন্তু তারা (শ্রমিকরা) কর্তৃপক্ষের কোনো কথা কর্ণপাত না করে আন্দোলনে নেমেছে। তবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০