বাজারে অনেক বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী আছেন। তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রতিদিন লেনদেনের পরে কোনো হাউজ থেকে কে কী শেয়ার কতগুলো কিনেছেন, তার সব তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এ তথ্যগুলো আবার কেনাবেচাও হয়। আর বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোথা থেকে তথ্য যাচ্ছে, তাও হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু এটি বন্ধ হচ্ছে না। আর যখন একজন বিনিয়োগকারী জানতে পারে, অমুকের কাছে এত শেয়ার হোল্ড আছে, তখন অনেকেই বিনিয়োগ করতে ভয় পান। যে কারণে বিনিয়োগের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আকতার হোসেন সান্নামত।
মোহাম্মদ হেলাল বলেন, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যে সময় প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হতো। সেখানে এখন গড়ে ৭০০-৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন বেশ কিছুদিন ধরেই হয়েছে। ২০১০ সালের দিকে পুঁজি সরবরাহের যে আকার ছিল, তা এখন তিনগুণের ওপরে হয়ে গেছে। বড় সরবরাহে যে রকম চাহিদা থাকার কথা, তা আমরা দেখছি না। একসময় লেনদেন কিছুটা বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল। এখন একটু কমে এসেছে। তবে ধীরে ধীরে কিন্তু টাকা আসছে বাজারে। আগে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর এক টাকা বাড়াতে গেলে দেড়, দুই কোটি টাকার শেয়ার ট্রেড করতে হতো। এখন সেই কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার ৫-১০ লাখ লেনদেন হলেই দর তিন-চার টাকা বেড়ে যায়। এতে বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই শেয়ার কিনে অপেক্ষা করছে এবং দর বাড়লেই ছেড়ে দিচ্ছে না। সেদিক বিবেচনায় আমার ধারণা, বাজারে ফান্ড অনেক ঢুকেছে। তবে আমাদের মোট মাইক্রো-ইকোনমিকসের যে গতিপ্রকৃতি তাতে পুঁজিবাজার অনেক বেশি তরঙ্গায়িত হওয়ার কথা।
আকতার হোসেন সান্নামত বলেন, বাজারে উৎপাদন নেই এমন কোম্পানির শেয়ারদর অযৌক্তিক হারে বাড়ছে। গত বুধবারে টপ টেনে ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি খুব বেশি ছিল না। বিষয়টি বাজারের জন্য ভালো নয়। কিছু ব্যাংকের বিনিয়োগের মাত্রা যা ছিল তার থেকে অনেক কমে গিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলোয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে গেছে। কারণ তাদের বিনিয়োগ সীমাসংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে কিছু বিধি-নিষেধ ছিল। তবে বাজারে অনেক বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী আছেন। তারা অনেকেই বলেন, প্রতিদিন লেনদেনের সময়ের পরে কে কী শেয়ার কোন হাউজ থেকে কতগুলো কিনেছেন, তার সব তথ্য চলে যায়। এ তথ্যগুলো আবার কেনাবেচাও হয়। আর এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোথা থেকে তথ্য যাচ্ছে, তাও হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু এটি বন্ধ হচ্ছে না। আর যখন একজন বিনিয়োগকারী জানে যে, অমুকের কাছে এত শেয়ার হোল্ড আছে তখন অনেকেই বিনিয়োগ করতে ভয় পান। যে কারণে বিনিয়োগের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। কিন্তু আরও অনেক বাড়ার সুযোগ ছিল। তাহলে কেন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। মূলত বিদেশিরা বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করে কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। তারা বেশি শেয়ার দীর্ঘ সময়ের জন্য কেনেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের শেয়ারবাজারে কতগুলো আছে? হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। বলতে গেলে নেই-ই। তাই তাদের জন্য ওই ধরনের শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তাহলেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম