শেয়ার বিজ ডেস্ক: ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট সংঘাতের কারণে বিশ্ববাসী বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার রোমে সংস্থার সদর দফতরে দেওয়া এক ভাষণে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বেসলি। খবর এএফপি।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার জাতিসংঘের লক্ষ্য বাস্তবায়ন তিনটি বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। এগুলো হলো সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক ধস। বেসলি বলেন, ‘আপনাদের জন্য আতঙ্কজনক খবর হচ্ছে বড় সংকট ধেয়ে আসছে।’ এ থেকে উত্তরণে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গত ৮ অক্টোবর জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলে, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে খরা, বন্যা আর ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এই মাত্রার লাগাম টেনে ধরতে সমাজের সব ক্ষেত্রে দ্রুত, বহুদূর প্রসারিত ও নজিরবিহীন পরিবর্তনের অপরিহার্যতা তুলে ধরে জাতিসংঘ প্যানেল। এছাড়া বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে যুদ্ধের বাস্তবতা। অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে অভিবাসী হচ্ছে বিপুল মানুষ।
এমন বাস্তবতায় জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রধান মঙ্গলবার জানান, ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে বিশ্বে প্রতি পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডে একজন করে শিশু মারা যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় বিশ্বে খাদ্য অপচয় নিয়েও সতর্কতা দেন তিনি। বেসলি জানান, উৎপাদন প্রক্রিয়া ছাড়াও মানুষের রান্নাঘরেও খাবার অপচয় হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ধনী দেশগুলোর সহজে এড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা এটা নয়, অভিবাসী সংকট হয়ে এটা তাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি এক শতাংশ ক্ষুধা বাড়লে অভিবাসী বাড়ছে দুই শতাংশ।’
জাতিসংঘের সর্বশেষ ক্ষুধা রিপোর্ট বলছে, গত বছর বিশ্বে ৮২ কোটিরও বেশি মানুষ বা প্রতি নয়জনে একজন ক্ষুধায় ভুগেছে। এ নিয়ে পরপর তিন বছর ক্ষুধায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ল। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৫ কোটি ৫০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। আর পুষ্টির সংখায় পরিবর্তন এনে ‘গোপন ক্ষুধা’র হিসাব ধরলে বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ এর আওতায় পড়বে। একই সময়ে বিশ্বের ছয় কোটি মানুষ মোটা হওয়াজনিত সমস্যায় (স্থূলতা) ভুগছে। এফএও’র প্রধান জোস গ্রাজিয়ানো দ্য সিলভা বলেন, বিশ্বজুড়ে স্থূলতার সমস্যার ব্যয় সশস্ত্র সংঘাত ও ধূমপানের মতোই ব্যয়বহুল।
ভ্যাটিকানে এক ভাষণে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করা শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণায় দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ থাকছে না, বরং তা হৃদয়গ্রাহী প্রকাশনা হয়ে লাইব্রেরির ক্যাটালগের শোভা বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষুধার কারণের বিরুদ্ধে যখন কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার সময়, তখন শুধু বিশাল ঘোষণা কাজের জিনিস নয়।’ পোপ বলেন, ‘ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অতিদ্রুত প্রয়োজন উদার অর্থায়ন, বাণিজ্য বাধা দূর করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনেতিক সংকট ও যুদ্ধবিগ্রহের কার্যকর প্রতিরোধ।’
বড় ধরনের সংকটের মুখে বিশ্ববাসী
