দেশে যে বড় প্রকল্পগুলো হচ্ছে তার বেশিরভাগের অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আদর্শ হচ্ছে বন্ড ইস্যু করা। আর এ ধরনের বন্ড যদি মার্কেটে আনা যায় এবং এর সেকেন্ডারি মার্কেট সৃষ্টি করা যায় তাহলে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার সাব্বির আহমেদ, এফসিএ এবং পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট রহমত উল্লাহ।
সাব্বির আহমেদ বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে নেই। নাজুক অবস্থায় রয়েছে পুঁজিবাজার। কয়েকটি মৌলভিত্তির কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো ভালো পারফরম্যান্স করছে না। গত পাঁচ থেকে ১০ বছরে এসব কোম্পানি শেয়ারদর অনেক খারাপ অবস্থানে নেমে এসেছে। পুঁজিবাজারে এখনও কিছু ফান্ডামেন্টাল সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো যদি আমলে না নেওয়া হয় তাহলে বাজার ভালো হবে না। বাজারে বড় সমস্যা বিনিয়োগকারীর আস্থার সংকট। এ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন কারসাজির কারণে। আর এ কারসাজিতে জড়িত রয়েছে স্পন্সর এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। ব্রোকারেজ হাউজ, ডিএসই এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বাজারসংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বাজারে। যেমন বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া। যাদের এসব কাজ করার কথা তারাই বিভিন্নভাবে কারসাজি করছে। বিশেষ করে ব্রোকারেজ হাউজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে শেয়ার ট্রেডিং ও কারসাজি করে কেনাবেচা করছে। দেখা গেছে একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকা নিয়ে ব্রোকারেজ হাউজে একটি মার্জিন অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং ওই ব্রোকারেজ হাউজ তাকে আরও সুবিধা দিল। একসময় দেখা যায় যখন তার ৪০ লাখ টাকা লোকসান দাঁড়িয়েছে তখন সে ওই ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। যেহেতু সে মনে করে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তাই পুঁজিবাজারে থাকার দরকার নেই। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্ট খোলা আছে। পরবর্তীতে একাধিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই ব্রোকারেজ হাউজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওই অ্যাকাউন্টে শেয়ার কেনাবেচা করছেন। ব্যক্তিগতভাবে তারাই লাভবান হচ্ছে। কথা হচ্ছে রক্ষক যদি ভক্ষক হয় অর্থাৎ যাদের আপনি বিশ্বাস করবেন তারাই যদি এ রকম আচরণ করে, তাহলে কীভাবে বিনিয়োগকারী আসবে। এখন বাজারের বড় সমস্যা হচ্ছে তারল্য সংকট। অতিদ্রুত এর কোনো সমাধান দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে শুধু ইকুইটি বা শেয়ার রয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজারে ইকুইটি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। তাই বাজারে ভালোমানের বন্ড আনতে হবে। দেশে যে মেগা প্রজেক্টগুলো হচ্ছে তার বেশিরভাগের অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এসব প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের জন্য আদর্শ হচ্ছে বন্ড ইস্যু করা। আর এ ধরনের বন্ড যদি মার্কেটে আনা যায় এবং এর সেকেন্ডারি মার্কেট সৃষ্টি করা যায় তাহলে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। আবার বিদেশি বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে। এর একটি প্রভাবও বাজারে পড়ছে। অনেক বিনিয়োগকারী অতি দ্রুত লাভবান হতে চায়। যখন একজন বিনিয়োগকারী দ্রুত লাভবান হতে চায় তখন লাভের চেয়ে লোকসানের হার বেশি থাকে। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে।
রহমত উল্লাহ বলেন, বাজার এখন স্থিতিশীল অবস্থানে নেই। যখন বাজার নিম্নগতির দিকে থাকে তখন মার্জিন লোনসহ আরও লোন থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ঝুঁকি কমে যাবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে কারও কথা না শুনে নিজে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ঘন ঘন শেয়ার ট্রেড করা কমিয়ে দিতে হবে। চোখ রাখতে হবে বাজারের প্রতি। সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এখন যদি কোনো বিনিয়োগকারী দেখে শুনে পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন, তাহলে লাভবান হবেন।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ