আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক এবং বাজেট দিন দিন বিশাল আকার ধারণ করলেও পুঁজিবাজার যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। পুঁজিবাজারের দিকে সরকারের মনোযোগ নেই। কিন্তু দেশের বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যদি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করা হতো তাহলে পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হতো। ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বাড়তো। অন্যদিকে প্রতিবছর সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে বিশাল ঘাটতি থাকে সেটি আর থাকতো না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ডিবিএর সভাপতি আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ এবং স্টারলিং স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও এসএম নাসির উদ্দিন।
ফোরকান উদ্দিন বলেন, আবগারি শুল্ক থেকে খুব বেশি না হয়তো ৩৫০ কোটি টাকার মতো আসবে। আর আবগারি শুল্ক আগেও ছিল। কিন্তু এ বাজেটে যদি বৃদ্ধি না করতো তাহলে সম্পূর্ণ উঠিয়ে দেওয়ার যে কথাটি সেটি আসতো না। কাজেই আমার মনে হয় এটি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রীর একটি বড় ভুল এবং এ বুদ্ধি তার আশেপাশের লোকজনই দিয়েছে বলে মনে হয়। তা ছাড়া এ বাজেটে অধিকাংশ খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে ভুক্তভোগী হবেন নির্দিষ্ট ও স্বল্প আয়ের মানুষ। ফলে এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করি।
এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। যা এ যাবত কালের সব থেকে বড় বাজেট। এখানে আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি বাজেট এক লাখ ছয় হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। আর এ ঘাটতি বাজেট কীভাবে পূরণ হবে? হয়তো এটি বিদেশি লোন, লোকাল ব্যাংকগুলো থেকে লোন অথবা ডোনেশনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এ ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে পরে আবার ঘাটতি হবে এবং বছরের পর বছর লভ্যাংশ দিতে হবে। কিন্তু বড় ফাইন্যান্সগুলো এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত ফাইন্যান্সগুলো যদি ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে করা যেত এবং যদি ব্রিজ ফাইন্যান্সিং করা যেত তাহলে আজকে আমাদের এ ঘাটতি বাজেটটি থাকতো না। আর এ ঘাটতির কারণে আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ধীরে ধীরে অনেকে দায়বদ্ধ হয়ে যাবো এবং প্রতিবছর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। কাজেই, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট যদি সম্প্রসারিত করতে পারতাম এবং সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর ফাইনান্সিং ব্যবস্থা যদি পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের থেকে সংগ্রহ করা যেত, তাহলে আগামী ২-৪ বছর পর এ ঘাটতি বাজেট আর থাকতো না। ফলে আমি মনে করি সরকারের এভাবে চিন্তা করা উচিত। আর এমন চিন্তার জন্য সরকারের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারক মহলে যারা আছেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যুক্ত করে কীভাবে আমরা বিদেশি কোম্পানি ও লোকাল ভালো কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে আনা যায় তা ভাবা। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তহবিল জোগাড় করা এবং সাধারণ জনগণ যে বিনিয়োগ করবে বড় প্রকল্পগুলোয় তাদের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ও একটি নিরাপত্তা দিতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা ডিপোজিট করতে যাবে না। তিনি আরও বলেন, গ্রিনফিল্ডের ক্ষেত্রে সরকার যদি নিশ্চিত করে প্রকল্পের খারাপ সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষতি সরকার বহন করবে। সে ক্ষেত্রে জনগণ গ্রিনফিল্ডেও বিনিয়োগ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। এতে ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়বে না বরং ইকুইটি বেজ অর্থনীতি উন্নত হবে। লক্ষ করলে দেখবেন পৃথিবীর যত দেশ উন্নত হয়েছে প্রতিটি দেশ ইকুইটি বেজ অর্থনীতির উন্নতির কারণে তাদের অর্থনীতি একটি শক্তিশালী পর্যায় দাঁড় করাতে পেরেছে। কাজেই আমি বলবো, আমাদের অর্থনীতির যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ও বাজেটের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের জিডিপির সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারের আকার অনেক বড় করতে হবে। আর ক্যাপিটাল মার্কেটের আকার যতদিন বাজেটের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশে না আসবে ততদিন আমাদের ঋণ নির্ভর অর্থনীতির (ডেবট বেজ ইকোনোমি) ওপর নির্ভর করতে হবে। কাজেই পুঁজিবাজারকে সম্প্রসারিত করার জন্য সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম