বড় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকিতে দুদকের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মোট ভ্যাটের ৫৬ শতাংশ আহরণ করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) বা ভ্যাট এলটিইউ। এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছরে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, বিমা, ওষুধ, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় চার হাজার ৩৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। দেশের নামি এমন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকিতে উদ্বেগ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে ফাঁকির রহস্য উম্মোচন ও ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট আদায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে দুদক। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছর ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক, দাখিলপত্র যাচাই ও প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার মাধ্যমে মোট চার হাজার ৩৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এর মধ্যে শুধু দাখিলপত্র যাচাইয়ের মাধ্যমেই তিন হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এছাড়া ৩০টি প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে আরও ৭৯৩ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে এলটিইউ। আর ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের মধ্যে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আদায়ও হয়েছে। বাকি রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াধীন। এ নিয়ে গত ১৩ আগস্ট দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় ‘বিদায়ী অর্থবছরে এলটিইউ’র কার্যক্রম, সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি দুদকের নজরে আসার পর এ নিয়ে কাজ শুরু করে সংস্থাটি। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দ্রুত সময়ে বিষয়টি তদন্ত করে দুদককে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়।
সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, বিমা, ওষুধ, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী, বড় করপোরেটসহ ১৭০টি প্রতিষ্ঠান এলটিইউ’র আওতায় রয়েছে। সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগও কম নয়। এলটিইউ প্রতিবছর বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। কিছু প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে রাজস্ব পরিশোধ করে, কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজস্ব আদায় করা হয়। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দাখিলপত্রে তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছর দাখিলপত্র যাচাইয়ে বেশি নজর দেয়। এতে ভালো ফলও পাওয়া যায়।
এলটিইউ’র কর্মকর্তারা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করা হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। নিরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি ফাঁকি উদ্ঘাটন হয়েছে মোবাইল অপারেটর থেকে। এছাড়া পেট্রোবাংলাসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তারা।
দুদকের চিঠির বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, দুদকের চিঠি এখনও হাতে পাইনি। পেলে যেসব প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে ফাঁকি দিয়েছে, কীভাবে এ ভ্যাট আদায় করা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর ১৬৬টি ইউনিট (প্রতিষ্ঠান) নিয়ে এলটিইউ’র যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭০। এর মধ্যে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০