Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 6:58 pm

বড় হারে শুরু টি-টোয়েন্টি মিশন

ক্রীড়া ডেস্ক: ওয়ানডে সিরিজের দুঃস্বপ্ন থেকে এখনও বের হতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এরইমধ্যে রোববার টি-টোয়েন্টি মিশনে নামতে হয়েছে টাইগারদের। কিন্তু এর শুরুতেও মিশে থাকল হতাশা। না ব্যাটিং, না বোলিং- কোনটিতে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি সফরকারীরা। যে কারণে ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। একইসঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজে মাহমুদউল্লাহর দল পেছনে পড়েছে ১-০ ব্যবধানে।

হ্যামিল্টনে রোববার কিউইদের ২১০ রান তাড়ায় বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে থামে ১৪৪ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর চেয়ে বড় হার আছে বাংলাদেশের আছে আর একটি, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কলকাতায় ৭৫ রানে।

রোববার কোন বিভাগেই নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও শুরুতে অভিষিক্ত নাসুম আহমেদের হাত ধরে সাফল্য পেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু এরপরের গল্প সফরকারীদের জন্য শুধুই ব্যর্থতার। এজন্য তারা দায়ী করতে পারে ডেভিড কনওয়ে ও উইল ইংয়ের। কেননা তৃতীয় উইকেটের এ জুটি করে ৬০ বল ১০৫ রান। যে কারণে দলীয় স্কোর বোর্ডে স্বাগতিকরা জড়ো করে ২১০ রান। শেষ পর্যন্ত যে লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে যেতে শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলটির হয়ে শুধু লড়াই করেন আফিফ হোসেন। এ বাঁহাতি করেন ৩৩ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৪৫ রান।

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে রোববার ম্যাচের প্রথম ওভারেই নাসুম ফিরিয়ে দেন ফিন অ্যালেনকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক আলোচনার জন্ম দেওয়া এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করলেন ‘গোল্ডেন ডাক’ দিয়ে। পরে মার্টিন গাপটিল ও কনওয়ের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় কিউইরা। পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা ওই একটি উইকেটই হারিয়ে তোলে ৪৮ রান।

গাপটিলকে রোববার বেশিদুর অবশ্য যেতে দেননি নাসুম। লং অফ সীমানায় তাকে সৌম্যর হাতে ধরা পড়ান এ স্পিনার। নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে গাপটিল ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৭ বলে করেন ৩৫। ভাঙে কনওয়ের সঙ্গে তার ৫২ রানের জুটি।

বাংলাদেশের জন্য রোববার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ইয়াং-কনওয়ে জুটি। প্রথমে ৩২ বলে আসে তাদেরন জুটির পঞ্চাশ, ৫৮ বলে একশ।
৩৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন কনওয়ে। ইয়াং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটি পান ২৮ বলেই। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশি দূর যেতে পারেননি ইয়াং। মেহেদি হাসানের বলে স্লগ করে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন মিড উইকেট সীমানায়। ভাঙে ৬০ বল স্থায়ী ১০৫ রানের জুটি। ৩০ বলে চার ছক্কা ও দুই চারে ইয়াং করেন ৫৩। শেষ পর্যন্ত কনওয়ে ৫২ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৯২ রানে। তার সঙ্গে ২০ বলে গড়া ৫২ রানের জুটিতে ফিলিপসের অবদান ১০ বলে ২৪।

নাসুম ৩০ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। শরিফুল ৫০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। মোস্তাফিজ দিয়েছেন ৪৮ রান। পাননি কোন উইকেট।

বড় রান তাড়ায় একটি বাউন্ডারি মেরেই ফিরে যান লিটন দাস। চোট কাটিয়ে ফেরা লকি ফার্গুসন থামান মোহাম্মদ নাঈম শেখকে। শুরু থেকে দারুণ ব্যাটিং করা তরুণ ওপেনার ৫ চারে ১৮ বলে করেন ২৭। এরপর শোধির স্পিন ভেলকিতে পড়ে টিম টাইগার্স। জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারায় সফরকারীরা। সৌম্যর ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শিকার শুরু করেন শোধি। এক বল পর বাজে শটে বোল্ড মোহাম্মদ মিথুন। পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। এরইমধ্যে আবার বাজে শটে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদি। অষ্টম ওভারে ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস তখন ধ্বংস্তুপ।

বিপদের সময় আবার আফিফ পান গাপটিলের সৌজন্যে জীবন। এরপরই এ বাঁহাতি নিজেকে মেলে ধরে। সপ্তম উইকেটে সাইফের সঙ্গে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। ৩৩ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৪৫ রান করেন আফিফ।

বিপদ আরও বাড়তে পারত, যদি ৫ রানে গাপটিলের হাতে জীবন না পেতেন আফিফ। বেঁচে গিয়ে দারুণ খেলে দলকে কিছুটা উদ্ধার করেন এই অলরাউন্ডার। আরেকপ্রান্তে সাইফ উদ্দিন টি-টোয়েন্টির দাবি ভুলে দেন উইকেট ধরে রাখায়। শেষ ওভারে ছক্কা ও চারে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সবচেয়ে বড় হার এড়ান সাইফ। ৩৪ বলে এই অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

শোধি ৪ ওভারে ২৮ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা যদিও কনওয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২১০/৩ (গাপটিল ৩৫, অ্যালেন ০, কনওয়ে ৯২, ইয়াং ৫৩, ফিলিপস ২৪; নাসুম ৪-০-৩০-২, সাইফ ৪-০-৪৩-০, শরিফুল ৪-০-৫০-০, মোস্তাফিজ ৪-০-৪৮-০, মেহেদি ৪-০-৩৭-১)।

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (নাঈম ২৭, লিটন ৪, সৌম্য ৫, মিথুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ১১, আফিফ ৪৫, মেহেদি ০, সাইফ ৩৪, শরিফুল ৫, নাসুম ০; সাউদি ৪-০-৩৪-১, বেনেট ৪-০-২০-১, ফার্গুসন ৪-০-২৫-২, সোধি ৪-০-২৮-৪, চাপম্যান ১-০-৯-০, ফিলিপস ১-০-৫-০, মিচেল ২-০-২১-০)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৬৬ রানে জয়ী

সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: ডেভন কনওয়ে