নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের কারিগরি সহযোগিতায় গৃহীত হয়েছে ডেলটা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। ২১০০ সাল পর্যন্ত নেয়া এ পরিকল্পনার আওতায় বর্তমানে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অধিকাংশ বাস্তবায়ন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রমে আরও গতি সঞ্চার করার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ব-দ্বীপ সম্মেলন বা ইন্টারন্যাশনাল ডেল্টা কনফারেন্স। রাজধানীর একটি হোটেলে আজ দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনে ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন কৌশল ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সম্মুখে ব-দ্বীপ পরিকল্পনার অগ্রগতি ও আগামী দিনের করণীয় বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সেখানে বন্যা ও নদীভাঙন প্রতিরোধ, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনÑএ ছয়টি বিষয়ে লক্ষ রেখে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন জোরদার করার লক্ষ্যে জিইডির অধীনে একটি ডেল্টা উইং স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) এ পরিকল্পনা অনুমোদনের সময় যেসব প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল, তাতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানা গেছে।
‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কাল (আজ) থেকে ‘ব-দ্বীপ’ বিষয়ক পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে দুদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এ সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে আরও বেশি মাত্রায় যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।’ তবে উন্নয়ন সহযোগীরা কিছু প্রকল্পের বিষয়ে পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন বলে জিইডি সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু উন্নয়ন সহযোগী ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু প্রকল্পে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে।
প্রথবারের মতো আয়োজিত দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুদিনের এই সম্মেলনে থাকবে ছয়টি অধিবেশ ও একটি গোলটেবিল বৈঠক। সেখানে আলোচনা হবে খাতভিত্তিক অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।
ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনার প্রথম ধাপে অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও গবেষণা-বিষয়ক প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ অর্থায়নের জোগান কীভাবে নিশ্চিত হবে, সে বিষয়েও এ সম্মেলনে আলোচনা হবে।
জানা গেছে, প্রথম ধাপে অর্থাৎ আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য ৮০টি প্রকল্প ব্যয়ের অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে প্রতিবছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫ শতাংশের মতো অর্থ প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ শতাংশ অর্থায়নের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে। বাকি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে জোগান দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান তৈরিতে নেদারল্যান্ডস সরকার এরই মধ্যে ৮৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত তহবিল, বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব পিপিপি পদ্ধতিকে বিবেচনা করা হয়েছে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে ‘কস্ট রিকভারি’র জন্য ক্রমান্বয়ে সুবিধাভোগী থেকে অর্থ সংগ্রহের (বেনিফিশিয়ারি পে প্রিন্সিপাল) নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে এবং তা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যানে পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষার কৌশল খুঁজে বের করাকে। এরপর রয়েছে পানির নিরাপত্তা। এ ছাড়া টেকসই নদী-অঞ্চল, জলাভ‚মি সংরক্ষণ এবং আন্তঃদেশীয় নদীর পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে ডেল্টা পরিকল্পনায়।