ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ অর্থসংস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডেল্টা প্ল্যানকে একটি উপহার। এ শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বিশাল সুনীল অর্থনীতি ভোগ করতে পারবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এর মাধ্যমে একদিকে দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, অন্যদিকে টেকসই উন্নয়নের পথও সুগম হবে। শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথম ধাপে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিশাল অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন: সমস্যা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’-এর প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উন্নয়ন সহযোগীরা এ মন্তব্য করেন। এর আগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি বিশ্বাস করি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারব। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখুন। কারণ আমাদের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য একটা সাজানো সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া। আর এটা সম্ভব ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় চিন্তা করেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করার। সেই হিসেবে এটা একটা বিউটিফুল প্রকল্প।’

তিনি আরও বলেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘সুনীল অর্থনীতি’ বা ব্ল– ইকোনমির সুফল ঘরে তুলতে পারব। সুনীল অর্থনীতি বা ব্ল–-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস। সমুদ্র থেকেই মাছ কিংবা মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে খাবার চাহিদা ও অন্যান্য অর্থনৈতিক মেটায়। মানুষ এবং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহƒত হয় সমুদ্র। এছাড়া সমুদ্র নানা ধরনের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ যেমন বালি, লবণ, কবাল্ট, গ্রাভেল এবং কপার ইত্যাদির আধার। এসবের সমন্বয়ে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, জলবায়ু ক্ষতি না করে আমরা পরবর্তী প্রজšে§র জন্য কিছু করতে চায় আর এটাই হলো ডেল্টা প্ল্যান। আমাদের মাটি, পানি ও বায়ু সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য কেউ দারিদ্র্য থাকবে না, কেউ ভ‚মিহীন থাকবে না। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে সরকারের সব উদ্দেশ্য সফল হবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু ইস্যু যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারব ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে।’

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ডেল্টা প্ল্যান আমাদের স্বপ্ন। এটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এই বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই ডেল্ট প্ল্যানের বিষয়ে দেশবাসীকে আরও সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। ডেল্টা প্ল্যানের স্বপ্নের বীজ তাদের হƒদয়ে বপন করতে হবে।’

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বিশাল অর্থায়ন প্রয়োজন। এই অর্থায়ন জোগান দেয়া ডেল্টা প্ল্যানের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা বাস্তবায়নের করলে ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য বিরাট মাইল ফলক হয়ে থাকবে। এই শতবর্ষী পরিকল্পনা একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। তবে এই জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন।’

বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ মোট ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও ব-দ্বীপ সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করতে চায় সরকার। দীর্ঘমেয়াদে পানি ও খাদ্যনিরাপত্তা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদি (১০০ বছর) সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑজাইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহো হায়াকাওয়া, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. কাওসার আহমেদ প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০