নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে ভবনসহ যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নেয়ার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে জানিয়েছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টির পাশাপাশি জনগণের ভোগান্তিও বাড়বে। তাই প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তারা। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিহ্যাব সভাপতি শামসুল আলামিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ, সোহেল রানা প্রমুখ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনেরও অনুমোদন নিতে হবে। শুধু অনুমোদন দিলেই হবে না, সিটি করপোরেশনকে অনুমোদন করা স্থাপনা নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থাও রাখতে হবে। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই আজ সংবাদ সম্মেলন করেন রিহ্যাব নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি আবাসন ব্যবসায়ী এবং যারা ব্যক্তিগত ভবন তৈরি করবেন, তাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, তা হবে অপরিণামদর্শী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দুটো প্রশাসনকে একটি কাজের দায়িত্ব দিলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। ফাইল ছোড়াছুড়ির নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। এমনিতে ভবনের নকশা পাস করতে গেলে রাজউকেই মানুষকে হয়রানি পোহাতে হয়। সেখানে নতুন এ সিদ্ধান্ত কাজের ভোগান্তি, বিড়ম্বনা, দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয়ক্সসবই বাড়াবে। এ জন্য রাজউক, না হয় সিটি করপোরেশন, যেকোনো একটি সংস্থা এই কাজ করুক।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে নতুন এই নিয়ম গৃহায়ণ শিল্পের জন্য গভীর সংকট তৈরি করবে। দ্বৈত অনুমোদনের এমন সিদ্ধান্ত ব্যবসাবান্ধব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণার শেষ নেই। জš§সনদ জটিলতাসহ সারা বছর মশা ও ডেঙ্গু লেগেই থাকে। সিটি করপোরেশনে এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও কাঠামো নেই। এখন ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দায়িত্ব তাদের দিলে সেখানেও হয়রানির নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।’
সিটি করপোরেশন থেকে স্থাপনা নিয়মিত তদারকি নিয়েও শঙ্কার কথা জানান রিহ্যাব সভাপতি। তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়মে সিটি করপোরেশন অনুমোদিত স্থাপনা নিয়মিত তদারক করবে। এ ক্ষেত্রে রাজউক অনুমোদিত অবকাঠামো শহরের জন্য কল্যাণকর মনে না হলে সেই কাজ বন্ধ করে দিতে পারবে। প্রশ্ন আসে, এই কল্যাণকর কাজের মাপকাঠি কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত।’
তিনি আরও বলেন, আগে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ১১টি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হতো। এ কাজ সহজ করতে ২০১৯ সাল থেকে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষÑএ তিন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদনের নিয়ম করা হয়। এর সঙ্গে এখন নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত করায় জটিলতা বাড়বে। তাই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি রাজউকের কাছেই তদারকির দায়িত্ব অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।