অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার ও ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংগঠন এফবিসিসিআই। রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে শনিবার ‘ফায়ার সেফটি চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড মিটিগেশন স্ট্র্যাটেজিস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে শহরের পাশাপাশি মফস্বলেও ভবন নির্মাণ নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণের বিকল্প নেই। তারা বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, শিল্পকারখানা নির্মাণ এবং নগরায়ণের ক্ষেত্রে সরকার প্রণীত বিধিবিধান ও আইনের যথাযথ প্রয়োগে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের তৎপরতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা সবাই বসবাসযোগ্য ও স্মার্ট ঢাকা গড়ে তুলতে চাই।
ভবন নির্মাণ নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসৃত হলে দেশের কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও স্থাপনার নির্মিত হবে না বলেই আমরা মনে করি। কবি বলেছেন, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও।’ কতই ভালো হতো, অনুষ্ঠানে উপস্থিত এফবিসিসিআই নেতারা যদি আশ্বস্ত করতেন যে নিজেরাই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার ও ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করবেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতারা এ বিষয়ে একাত্ম হলে দেশের অন্য ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষও উৎসাহিত হতেন।
যখনই কোনো ভবনধস বা অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, তখনই আবাসন খাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা আমাদের সামনে আসে। তখনই জানা যায়, নিয়ম মেনে ভবন নির্মিত হয়নি। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে এটিই একমাত্র ব্যবসা, যেটার ওপর একটা আইন হয়েছে, সেটা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট আইন। পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারণী অনেক বিষয় মাথায় নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। এসব মেনেই ব্যবসায়ীদের ভবন নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু তারা যে তা যথাযথভাবে মানেন না।
বেশিরভাগ ভবনের সামনে লেখাÑ‘অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন।’ তবে কি গাড়ি সড়কে থাকবে! কেন বাইরে রাখতে হবে পথচারী ও অন্য গাড়ির ভোগান্তি বাড়িয়ে! কেন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করে ভবন নির্মাণ করা হয়? ভবন নির্মাণ ও অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয় মাথায় রেখেই ভবন নির্মাণ করতে হবে, তা যে কাজেই ব্যবহার করা হোক না কেন। অন্যথায় ভবিষ্যতে ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজšে§র নিরাপদ আবাসনের জন্য আইনকানুন মেনে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে আবাসন ছাড়াও আরও অনেক বিষয় জড়িত। এর মাধ্যমে বালি, সিমেন্ট, ইট, রড, টাইলসসহ বিভিন্ন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রকৌশলী ও স্থপতিদের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবই ইতিবাচক, কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ যাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয় এবং ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।