ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ডিএনসিসির ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক দশকেও রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। অন্যদিকে এ বাজার স্থানান্তর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের জটিলতা চলছেই। সিটি করপোরেশনের আরেক মার্কেট গুলশান-২-এর ডিএনসিসি মার্কেট কয়েক দিন আগে পুড়ে গেল। সে আগুনে ধসে পড়লো ২৯১টি দোকান। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন মার্কেটের পার্কিংয়ে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদের পুনর্বাসন ও সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

নতুন মার্কেট স্থাপন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট পুনর্নির্মাণ অনেক সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে কারওয়ান বাজার ও গুলশানের ডিসিসিআই মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় এর প্রমাণ মেলে। আর এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নতুন করে সাত বাজারে ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছেন ওইসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে এসব মার্কেটের প্রতি ক্রেতার অনীহা তৈরি হচ্ছে।

এসব মার্কেট যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যবসায়ীদের অজানা নয়। সিটি করপোরেশন একাধিকরার এসব মার্কেটে নোটিস দিয়েছে। মার্কেট ছাড়তেও বলেছে ব্যবসায়ীদের। তবে ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্ট বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এসব মার্কেট

ছাড়তে নারাজ। এতে প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে এসব।

জানতে চাইলে গতকাল ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘এক যুগেও কারওয়ান বাজার সরিয়ে নিতে পারেনি সিটি করপোরেশন। আগুনে এক মার্কেট পুড়েছে, তাদের দুরবস্থা লাঘব করতে পারছে না তারা। আর এখন এতগুলো বাজার ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। এতে আমাদের ভবিষ্যৎটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একবার দোকান ছাড়লে তো আর পাওয়ার আশা নেই। এ নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি।’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাতটি বাজারের গুলশান-১ কাঁচা মার্কেট, গুলশান-২ কাঁচা মার্কেট (উত্তর), গুলশান-২ পাকা মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, খিলগাঁও সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজার আড়ত ভবন, কারওয়ান বাজার ১নং ভবন মার্কেট, কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজার মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২নং ভবন মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার মার্কেট ও গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান মেয়র আনিসুল হক। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের বিষয়ে কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ছেড়ে যেতে বলা হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। আর বিপণিবিতানগুলো স্থানান্তরের জন্য আমাদের জায়গাও নেই। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কোনো দায় নেবে না।’

এদিকে খিলগাঁও সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব এসএম কাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যাদের মার্কেটে লাখ লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করি, তারাই দায়িত্ব নেবে না। আমরা মার্কেট ছেড়ে যাবো কই? এ বাজার যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা আমরা জানি। তবে যেসব মার্কেটে ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে, সেসবে সিটি করপোরেশনের প্রক্রিয়া তো স্বচ্ছ নয়।’

তিনি বলেন, ‘তবে ব্যবস্থা না করে হকারদের যেমন উচ্ছেদ করা হচ্ছে, মেয়রের কথায় আমরাও তেমন ঝুঁকিতে পড়েছি। তবে ব্যবস্থা না হলে আমরা মার্কেট ছাড়বো না।’

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কবে নাগাদ এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের সুব্যবস্থা হবে। এসব কী মেরামত হবে, নাকি নতুন করে মার্কেট হবে কিছুই জানা যায়নি। অপরদিকে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এসব মার্কেটে আসতে ক্রেতারা অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

তালতলা খিলগাঁও মার্কেট বণিক সমিতির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন আওলাদ দাবি করেন, এ মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ; তবে নিচতলা ভালো রয়েছে। মার্কেট না ভেঙে দোতলা সংস্কার করে চালানো যায়। সবাই যদি বলেন মার্কেট ভাঙতে, তাহলে হাজার হাজার ব্যবসায়ী যাবেন কোথায়?

বেশ কয়েকবার সিটি করপোরেশন তাদের মালিকানায় থাকা মার্কেটগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তবে আংশিক ও বিচ্ছিন্নভাবে এসব সংস্কার তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। আবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের চাপ কমাতে ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর একনেকে ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস হয়। সেখানে পুরনো মার্কেটের কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের কথাও রয়েছে। প্রথম ধাপে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত তিন দফা সময় বাড়িয়েও এসব মার্কেট সম্পূর্ণ চালু করা সম্ভব হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০