শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপে দাবানল ক্রমে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। দ্বীপটিতে এ পর্যন্ত দাবানলের কারণে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো কয়েকশ’ লোক এখনো নিখোঁজ, এবং অগ্নিনির্বাপন কর্মীরা এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। খবর: বিবিসি ও সিএনএন।
মাউই দ্বীপের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে হাওয়াইয়ের গভর্নর জশ গ্রিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, দুই হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছেন। ১১ হাজার মানুষ বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছেন। দাবানলে ১,৭০০ ভবন জ্বলে ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “বিপর্যয় শুরুর পর থেকে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন; কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে।”
গত মঙ্গলবার এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিলো এবং পরে হারিকেন ডোরার প্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকায় এখনো অনেক মানুষের সন্ধান পায়নি কর্তৃপক্ষ।
শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মাউই-এর প্রায় এগার হাজার মানুষ এই দুর্যোগের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। মাউই কাউন্টির মেয়র রিচার্ড বাইসেন ঘরবাড়ি ছেড়ে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে তাদের সতর্ক করে এখনই বাড়ি না ফিরতে বলেছেন।
অন্যদিকে গভর্নর জোস গ্রিন বলেছেন ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে হোটেলগুলোতে দুই হাজার কক্ষ চাওয়া হয়েছে তাদের জন্য।
এছাড়া যেসব এলাকায় লোকজন এখনো বসবাস করতে পারছে সেখানকার মানুষদের তাদের বাড়ির অতিরিক্ত কক্ষে আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
গভর্নর জশ গ্রিন জানান, অগ্নিকাণ্ডে লাহাইনার বেশিরভাগ অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং এটি হাওয়াইর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা। হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অন্তত ১ হাজার দালান পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
বিবিসি পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ আছেন। তবে এই সংখ্যাকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে আখ্যায়িত করেন স্থানীয় কাউন্সিল কর্মকর্তা অ্যালিস লি। এর আগে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নিখোঁজ মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত নয় এবং অনেকের সঙ্গে হয়তো ‘যোগাযোগ স্থাপন’ করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার শহরের বাইরের জঙ্গলে দাবানল দেখা দেয় এবং এককালে হাওয়াইর রাজধানী লাহাইনার ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
হাওয়াইয়ের চেয়ে প্রায়ই দাবানলের শিকার হয় ক্যালিফোর্নিয়া। হাওয়াইয়ের পুনরুদ্ধারের সহায়তার জন্য অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দল পাঠানোর ঘোষণা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।
টুইটারের এক পোস্টে গ্যাভিন নিউসম বলেন, আমরা এই ভয়াবহ দাবানলের মধ্যে মাউই এবং সমস্ত হাওয়াইয়ের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।
জরুরি সেবা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কেনেথ বলেছেন, বর্তমানে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের প্রাণ বাঁচানো, তাদের দুর্ভোগ কমানো এবং যত বেশি সম্ভব সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমানো। দ্বীপের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ২৯টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ফলে দ্বীপটি বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাও ব্যাহত হয়েছে।
দাবানলের পেছনে শুষ্ক আবহাওয়া, দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি ও ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ মুহূর্তে মাউইতে ৩টি পৃথক অবস্থানে বড় আকারে দাবানলের ঘটনা ঘটছে এবং এই ৩ অবস্থানের কোথাও এখনো আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত আছেন। একইসঙ্গে উদ্ধারকর্মীরা নিহতদের মরদেহ উদ্ধারের কাজও করছেন। ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন থেকে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর পাঠানো হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হওয়ার ১ বছর পর সুনামিতে হাওয়াইর মূল দ্বীপে ৬১ জন মারা যান।
জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব কারণেই বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও মাত্রা বাড়ছে।
কার্বন নিঃসরণ না কমাতে পারলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।