Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:19 pm

ভয়াবহ বায়ুদূষণ: সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা নয়াদিল্লিতে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শীতের শুরুতেই ভয়াবহ বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। বায়ুদূষণ জনিত জাতিসংঘের সূচক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী বাতাসের মান ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে এই ঘোষণা। খবর: এনডিটিভি, বিবিসি।

সেই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে জরুরি নয় এমন সব ভবন নির্মাণ কাজ এবং পেট্রোল ও ডিজেল চালিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দপ্তরের কর্মকর্তারা।

জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচআই) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একিউআই সূচক অনুযায়ী, কোনো শহরের বাতাসের গুণাগুণ যদি ০ থেকে ৫০ পয়েন্টের মধ্যে থাকে তাহলে তা ‘ভালো’, ৫১ থেকে ১০০’র মধ্যে থাকলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ পয়েন্টের মধ্যে থাকলে ‘সহনীয়,’ ২০১ থেকে ৩০’র মধ্যে থাকলে ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০’রর মধ্যে থাকলে ‘খুব খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০’র মধ্যে থাকলে ‘ভয়াবহ’।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সংস্থা সেন্ট্রাল পল্যুশন কন্ট্রোল বোর্ড (সিপিসিবি) শুক্রবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই দিন রাজধানী নয়াদিল্লির বাতাসের গড় মান নেমেছে ৩৪৬ পয়েন্টে, যা একিউআই সূচক অনুযায়ী ‘খুব খারাপ’ অবস্থা।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দিল্লির লোদি রোড, জাহাঙ্গীরপুরী, আরকে পুরম এবং আইজিআই বিমানবন্দর এলাকার বায়ুদূষণ ‘ভয়াবহ’ পর্যায়ে রয়েছে। একিউআই সূচক অনুসারে এসব এলাকার বাতাসের মান যথাক্রমে ৪৩৮, ৪৯১, ৪৮৬ এবং ৪৭৩।

দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের সীমান্তবর্তী শহর নয়ডা বেশ কিছু এলাকার বাতাসও ‘ভয়াবহ’ অবস্থায় রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সিপিসিবি।

প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বায়ু দূষণ শুরু হয় দিল্লিতে। এই দূষণের প্রধান কারণ দিল্লির দুই সীমান্তবর্তী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার গ্রামগুলোতে বিপুল পরিমাণ খড়-বিচালি পোড়ানো।

শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এসব গ্রামের দরিদ্র মানুষরা খড়-বিচালি পোড়ান, কিন্তু সেই আগুনের ফলে সৃষ্ট ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বাতাসে ভেসে দিল্লির বায়ুতে মিশে যায়।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, জোর বাতাস থাকলে এসব উপকরণ এমনভাবে ভেসে বেড়াতে পারত না। কিন্তু অক্টোবরের শেষ থেকে দিল্লির বাতাস ভারী ও কুয়াশাচ্ছন্ন হতে থাকে। সেই ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মিশে এক নাভিশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সেই সঙ্গে দিল্লির সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে শীতকালে বিপুল পরিমাণ খড়-বিচুলি পোড়ানো হয়; সেখান থেকেও অতিক্ষুদ্র বিভিন্ন বস্তুকণা ভেসে আসে দিল্লির বাতাসে।

দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নিখিল মোদি ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বলেন, ‘আমরা বছরের সেই সময়ে এসে পৌঁছেছি যখন বাতাসে দূষণ বাড়তে থাকে। গত কয়েক দিন ধরে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ঠাণ্ডা, চোখ জ্বালাপোড়া প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকজন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। প্রতিদিনই রোগীদের সংখ্যা বাড়াছে।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘দিল্লির বাতাসের এখন যে অবস্থা, তাতে যে কোনো বয়সী ব্যক্তিই আক্রান্ত হতে পারেন। রাজধানীর বাসিন্দাদের প্রতি আমার পরামর্শ— খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না এবং যদি বাইরে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।’