নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের র্যাম্পের পিলারে ফাটলের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের গঠিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ে সিটি করপোরেশনে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানিয়ে তদন্ত দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভুঁইয়া বলেছেন, ‘আপনারা সেখান থেকে জানতে পারবেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হলো, ভয়ের কিছু নেই।’
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান এ কমিটির সদস্য। গতকাল দুপুরে তারা যখন ফ্লাইওভারের ওই র্যাম্পটি দেখছিলেন, তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
গত ২৫ অক্টোবর রাতে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের র?্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই পুলিশ ওই র?্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমএ মান্নান ফ্লাইওভারটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নির্মাণ করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভব হলে আগামীকালের মধ্যেই প্রতিবেদন দিতে বলেছি। তদš প্রতিবেদন পেলে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেব।’ পরিদর্শনের পর ফাটলের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতামত আমরা আগেই বলেছি। এখন তদন্ত চলাকালে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। প্রতিবেদন পেলে আপনাদের জানাব।’
২৬ অক্টোবর দুপুরে ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম ও চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাটল দেখে র?্যাম্পের নির্মাণ ত্রুটি অথবা নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। ওইদিন সকালে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএর প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, হালকা গাড়ির জন্য তৈরি র?্যাম্পে ভারী গাড়ি চলায় ফাটল হতে পারে। তবে সেদিন বিকালে তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, সেখানে কোনো ফাটল হয়নি।
পরদিন ২৭ অক্টোবর নকশা প্রণয়নকারী কোম্পানি ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং ঠিকাদারি কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন শেষে দাবি করেন, ফ্লাইওভারের পিলারে কোনো ফাটল নেই, যা দেখা যাচ্ছে তা হলো কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। র্যাম্পটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য নকশা করা হলেও সেখানে ভারী যানবাহন চলাচল করার বিষয়টি দুই সংস্থাই স্বীকার করেছে। তবে র্যাম্পের শুরুতে ‘হাইট বেরিয়ার’ না থাকার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে সরকারি সেবা সংস্থা দুটি।
১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত এক দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। সিডিএ ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। স্থানীয়দের দাবির জন্য নির্মিত র্যাম্পটি প্রায় চার বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে সিডিএ।