নতুন ধরনের করোনার বিরুদ্ধে টিকা আদৌ কার্যকর কি না, তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। করোনার নানা ধরন ডেলটা, ডেলটা প্লাস, ল্যাম্বডা আরও কত কী! নতুন ঢেউয়ে দেখা যাচ্ছে, এই কভিড-১৯-এর নতুন নতুন ধরন যেমন দ্রুত ছড়ায়, তেমনি বেশিসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয় এবং টিকার কার্যকারিতা ঠেকিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও এসব ধরনের বেশি।
এখন যেসব টিকা চালু রয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল করোনার মূল ধরনটির চিকিৎসার জন্য। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন পরিবর্তিত ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এগুলো কাজ করবে, তবে তার কার্যকারিতা হবে কম।
ফাইজারের টিকার ওপর গবেষণাগারের প্রাথমিক তথ্য এবং রোগীদের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এটি নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে কার্যকারিতা কিছুটা কম। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্যের ধরনের বিরুদ্ধেও একইভাবে কার্যকর। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে এটি কম সুরক্ষা দেয়। মডার্নার টিকা দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে এর ইমিউন রেসপন্স দুর্বল ও স্বল্পস্থায়ী।
ভবিষ্যতে ধরনগুলোয় কী ধরনের পরিবর্তন ঘটবে, তার ওপর নির্ভর করবে বয়োবৃদ্ধ ও প্রকট শারীরিক সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ ধরনের বুস্টার টিকার প্রয়োজন হবে কি না। যদিও গবেষকেরা দাবি করছেন যে, ফাইজারের টিকা নিলে বুস্টার সম্ভবত আর দরকার হবে না। তবু এই ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কারণ এত কিছুর পরও বিশ্ব করোনামুক্ত হতে পারেনি, বরং দেশে দেশে বারবার আঘাত হেনে চলেছে।
তবে যে ধরনই আসুক না কেন, মাস্ক কিন্তু সব ধরনকেই আটকাবে। আর তাই বলি, ধরন যা-ই হোক না কেন, আমাদের একটু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, যেন আমরা মানুষকে সঠিক বার্তা দিতে পারি। আমরা যত যা-ই বলি না কেন, যে পরিবর্তন বা যে ধরনই আসুক না কেন, আমাদের কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। সব সময় মাস্ক পরে চলতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবেই। একই সঙ্গে ভ্যাকসিনও নিতে হবে, যাতে সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে। তবে টিকা নিয়েছেন বলেই নিজেকে সুরক্ষিত ভাবার কারণ নেই। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
যথানিয়মে মাস্ক পরলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমেই, আরেকটি উপকারও হয়। শ্বাস নেয়ার সময় যে বাতাস আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে, তাতে আর্দ্রতা বাড়িয়ে তোলে মাস্ক। তা ছাড়া বায়ুবাহিত ও শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, এমন অন্যান্য রোগ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিবি প্রভৃতির বিরুদ্ধেও কার্যকর।
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ