এমডি নুরুল মোস্তফা, কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত মঙ্গলবার কুবি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের স্বাক্ষরিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ওপর রাখা ১০০ শতাংশ নম্বর নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য সহনীয় ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তির ক্ষেত্রে মোট ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। যার ১০০ নম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে হওয়া ভর্তি পরীক্ষা থেকে। আর বাকি ১০০ নম্বর বিবেচনা করা হবে এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ওপর ভিত্তি করে। গুচ্ছ পদ্ধতির আগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের ওপর ৫০ শতাংশ নম্বর রাখা হলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে, যা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মূল নম্বরের সমান। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার ওপর এত নম্বর রাখা নিয়ে বিপত্তি হয়েছে। এবার কভিড পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মাধ্যমিকের ফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাস দেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে মাধ্যমিকে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারাই অটোপাসের মাধ্যমে এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে এসে সমপরিমাণ ফল অর্জন করেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন মূলত হচ্ছে মাধ্যমিকের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘সি’ ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন মুশফিকুর রহমান। এ ইউনিটের প্রকাশিত ফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬৮ নম্বর পান এ শিক্ষার্থী। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মুশফিকের জিপিএ ছিল যথাক্রমে ৩.৮৩ ও ৪.২৫। অন্যদিকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ অনুযায়ী অটোপাসের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মুশফিকের চেয়ে কম নম্বর অর্জন করা শিক্ষার্থীও ভর্তিযুদ্ধে তার চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাস থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিগত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল থেকে ২০ শতাংশ করে রেখেছে। রাজশাহী ও গুচ্ছভুক্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য পৃথক কোনো নম্বরই রাখেনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিকে ৪০ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর রাখলেও পরে সে সিদ্ধান্ত হতে সরে এসে ২০ শতাংশ করে। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ৫০ শতাংশ করে সর্বমোট ১০০ শতাংশ নম্বর রাখে।
বেশ কয়েকজন ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, অনেক শিক্ষার্থীই মাধ্যমিকে খারাপ ফল করলেও উচ্চ মাধ্যমিকে ফল ভালো করার চেষ্টা চালায়। এবার অটোপাসের কারণে মাধ্যমিকের ফলের ওপর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হয়েছে। এজন্য অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে এত নম্বর রাখায় আমাদের মূল্যায়নটা এ দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে হবে। এতে ভর্তি পরীক্ষা ভালো দিয়েও আমরা পিছিয়ে পড়ব।
ইয়াসিন আরাফাত নামের ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক সময় মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে ফল আশানুরূপ না হলেও ভর্তি পরীক্ষা ভালো
হয়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেও জিপিএর এ ১০০ নম্বরের জন্য আমরা ভর্তি প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে পড়ব। আর জিপিএকেই যদি এত গুরুত্ব দেয়া হয়, ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কী? ভর্তি পরীক্ষা ভালো করলেও জিপিএর জন্য অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীবান্ধব একটি পদ্ধতি। আমরা ভর্তিচ্ছুদের স্বপ্নভঙ্গ হোক সেটা চাই না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য সহনীয় ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা হবে।