ভর্তুকির পাশাপাশি লাফিয়ে বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জ

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 100?

ইসমাইল আলী:কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ নিয়মিত বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়তে থাকায় এ খাতে ভর্তুকি বাড়াতে হয়। তবে এ ভর্তুকির বড় অংশই চলে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। ফলে জনগণ এর তেমন কোনো সুফল পায়নি। বরং গত দুই বছর কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম।
যদিও গত দুই বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ভর্তুকি ও দাম বৃদ্ধি করেও লোকসান সামাল দিতে পারেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে বড় অঙ্কের ঘাটতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি। তবে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এ সময় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ব্যয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।


পিডিবির তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র সাত হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই পিডিবিকে গুনতে হয় ১০ হাজার ৯৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত ছিল ১৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ হিসাবে ভর্তুকির তুলনায় ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ বেশি গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

পরের অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় আট হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। যদিও ওই অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে পিডিবিকে গুনতে হয় ১৩ হাজার ২১ কোটি তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত দাঁড়ায় ১৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছর ভর্তুকির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ অর্থ বেশি গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

২০২১-২২ অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে করা হয় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছর পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয় করতে হয় ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত বেশ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১০৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ ভর্তুকির তুলনায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের চাপ অনেকটাই কমে আসে।
সূত্রমতে, পরের অর্থবছর হিসাব অনেকটাই পাল্টে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ সে তুলনায় কম হারে বাড়ে। এতে ওই অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয় (আদানিসহ) ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর সে বছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির মাত্র ৬০ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

যদিও গত অর্থবছর এ চিত্র আবারও পাল্টে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম দ্রুত হ্রাস পায়। অন্যদিকে দেশে নতুন বড় বেশ কিছু কেন্দ্র চালুর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ এক লাফে ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আদানি, এসএস পাওয়ার ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এ কেন্দ্রগুলো নতুন যুক্ত হওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত অর্থবছর পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে (অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী) ২৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে ১০ হাজার ১০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছর ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। যদিও গত অর্থবছর পুরো ভর্তুকি নগদে দেয়া হয়নি। নগদে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ১২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। বাকি ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বন্ড আকারে দেয়া হয়।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, ডলারে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের শর্ত এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। গত অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার অনেকটা বাড়ায় দ্রুত বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরিমাণ। দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিদেশি ঋণ না থাকলেও ডলারে চুক্তি করা হয়েছে। তবে ডলার পরিবর্তে দেশীয় মুদ্রায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হলে এ খাতে ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর বেসরকারি খাতে নির্মিত রেন্টাল ও আইপিপিগুলোর (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৩ হাজার ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ব্যয় বেড়েছে পাঁচ হাজার ৯৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাপাসিটি চার্জের ক্ষেত্রে মূলত দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ নন-এসকেলেবল ও অপরটি এসকেলেবল। মূলত ক্যাপিটাল মেশিনারিজ তথা মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় নন-এসকেলেবল অংশে অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর বাংলাদেশের প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দেশীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়েছে। তাদের এ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেশীয় মুদ্রায়। তবে তারা ক্যাপাসিটি চার্জ নিচ্ছে ডলারের রেটে। ফলে এ খাতের বাড়তি অর্থ ঢুকছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পকেটে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে বেশ কিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয় সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় ডলারে। যদিও বর্তমানে কুইক রেন্টালের সংখ্যা কমে এসেছে, তারপরও বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোকে ডলারেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের পর বেসরকারি খাতে বড় বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। আইপিপি নামক এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারের বিনিময় হার ধরে টাকায় পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ বিনিময় হার যত বাড়ে, ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ব্যয়ও তত বাড়ে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০