Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:17 am

ভর্তুকি চাহিদা ৪৩,৭০০ কোটি ছাড় মাত্র ৭,৩৫৯ কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি: উচ্চ মূল্যের বিদ্যুতে প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে। তবে প্রতি বছরই ভর্তুকি বকেয়া থেকে যাচ্ছে, যা পরের অর্থবছর ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এভাবে বিলম্বে অর্থ ছাড় নিয়ে ধুঁকছে বিদ্যুৎ খাত। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ফলে জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। দেয়া হচ্ছে না ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থও।

ভর্তুকি ছাড় চেয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়েছে পিডিবি। পরে তা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর জুন পর্যন্ত ভর্তুকি ছাড় করা হয়েছে ২৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার ১৫১ কোটি টাকা ২০২১-২২ অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকি। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ভর্তুকি ছাড় হয়েছে মাত্র সাত হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছর ভর্তুকি দরকার ছিল প্রায় ৪৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ভর্তুকি চাহিদামতো ছাড় না হওয়ায় শুধু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া পড়েছে প্রায় দুই দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারি-বেসরকারি উভয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে আরও প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছরই ভর্তুকির কিছু অংশ বকেয়া থেকে যায়। তবে গত দুই অর্থবছর ধরে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। এতে চাহিদামতো ভর্তুকি না পাওয়ায় তেল আমদানির বিল ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করায় ঘাটতি বাড়ছে। তারা আরও জানান, গত অর্থবছরের মে পর্যন্ত ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। তবে ছাড় হয়েছে মাত্র সেপ্টেম্বরের, তাও আংশিক। এভাবে চলতে থাকলে গত অর্থবছরের ভর্তুকি ছাড় হতে চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে আট হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা এবং গত অর্থবছর ২৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। যদিও প্রতি বছরই চাহিদা ছিল আরও বেশি। এতে ভর্তুকি জমে যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরের ভর্তুকি বাবদ সম্প্রতি দুই হাজার ৭০০ টাকা ছাড় করা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছর আগের ভর্তুকি এখন ছাড় করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বড় ধরনের তহবিল সংকটে পড়েছে পিডিবি। আর চাহিদামতো বিল না পাওয়ায় জ্বালানি তেল তথা ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছে না বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল আমদানি করতে না পারায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার ব্যবহার হচ্ছে না। গতকাল তেলচালিত ৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। তাপমাত্রা বাড়লেই লোডশেডিং বেড়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল (১৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত) রাত ১২টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৪৬৭ মেগাওয়াট। রাত ১টায় তা বেড়ে হয় এক হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। রাত ২টায় তা কিছুটা কমে হয় এক হাজার ৪৩৩ মেগাওয়াট, ৩টায় এক হাজার ৩১৭ মেগাওয়াট, ৪টায় এক হাজার ১৫৩ মেগাওয়াট ও ভোর ৫টায় এক হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। এরপর লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচে নামে।