ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বিঘিœত হচ্ছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ বা রেন্টাল ও আইপিপির বিলও দিতে পারছে না পিডিবি। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এজন্য বাধ্য হয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছে পিডিবি। এ নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব
ইসমাইল আলী: ২০২২ সালের শুরু থেকে বিদ্যুৎ খাতে নিয়মিত ভর্তুকি ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পরিশোধ করতে পারছে না বেসরকারি খাতের আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টাল এবং সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল। তাই তারল্য সংকট কাটাতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া ভর্তুকি ও বকেয়া বিলের বিস্তারিত উঠে এসেছে। চিঠির তথ্যমতে, গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে ২৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এতে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে পিডিবি। ফলে রেন্টাল, আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) এবং সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
চিঠির তথ্যমতে, গত বছর জুনের ভর্তুকি বকেয়া রয়েছে তিন হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, জুলাইয়ের চার হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, আগস্টের চার হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরের চার হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, অক্টোবরের তিন হাজার ৮৬২ কোটি টাকা, নভেম্বরের তিন হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এর পরের ভর্তুকি এখনও হিসাব করা হয়নি।
এদিকে ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় না হওয়ায় বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া রয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, অক্টোবরের ছয় হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, নভেম্বরের পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ডিসেম্বরের পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং চলতি বছরের জানুয়ারির পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর পরের বিল এখনও হিসাব করেনি পিডিবি।
চিঠিতে বলা হয়, আইপিপিগুলোর এ বিপুল পরিমাণ অর্থ অপরিশোধিত থাকায় কোম্পানিসমূহ যথাসময়ে তাদের আমদানিকৃত জ্বালানির (ফার্নেস অয়েল ও কয়লা) মূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির ঋণপত্র খুলতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো অর্থের অভাবে ঋণদাতাদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ ও লুব অয়েল কিনতে পারছে না। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মাসিক বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পিডিবির তারল্য ঘাটতি নিরসনে প্রাপ্য ভর্তুকির বিপরীতে বাণিজ্যিক (দেশি ও বিদেশি) ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে পিডিবি। অর্থ ছাড়ের যে অবস্থা তাতে জমে থাকা বকেয়া ছাড় হতে হতে চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ গ্রহণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে।