Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:04 am

ভাইরাস জ্বর

কয়েক দিন ধরে সারা দেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন ও তীব্র গরমের ফলে ভাইরাসজনিত জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ভাইরাস জ্বরসহ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ডায়রিয়া ও গরমের বিভিন্ন রোগে। এটা আসলে মৌসুমি জ্বর। হাসপাতালগুলোয় ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। জ্বরের সঙ্গে শিশুদের ভোগাচ্ছে খুসখুসে কাশি। একই পরিবারের একাধিক সদস্যও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভাইরাসজনিত জ্বর মানেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নয়। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আবহাওয়ারও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এতে রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও মানবদেহে রোগ সৃষ্টিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। এছাড়া অতিরিক্ত গরম, বাতাসের আর্দ্রতা, ধুলাবালি ও পরিবেশ শরীরের জন্য অনুকূল নয়। ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস জš§ নেয়। শরীরে ভাইরাস জš§ানোর প্রভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাস জ্বর দেখা দেয়। সাধারণত ভাইরাস আক্রমণের দুই দিন পরও জ্বর হতে পারে, আবার সাত দিন পরও জ্বর হয়। জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীর ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ার অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, সারা শরীরে চুলকানি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হওয়ার মতো লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা দেয়।
ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে ওইসব লক্ষণই যে প্রকাশ পাবে, তা কিন্তু নয়। কিছু ভাইরাস জ্বর পতঙ্গের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে আরবোভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমণে রক্তপাতের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রক্তপাত ত্বক থেকে বা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো অঙ্গ থেকেও হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
ভাইরাস জ্বর সাধারণত তেমন কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। তাই এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিভিন্ন ধরনের জ্বর কমানোর ওষুধ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, ওষুধ যতটা সম্ভব কম সেবন করা ভালো। অনেকে সাত দিনের বেশি জ্বর থাকলে কিংবা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রির বেশি জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এটি প্রয়োজনীয় নয়, হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ধরনের ওষুধ সেবন করা যাবে না। শুধু প্যারাসিটামল খেলেই হয়। সেইসঙ্গে প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম। অন্যদিকে খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। খাবারের মধ্যে ভিটামিন ‘সি’ ও জিঙ্কযুক্ত খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। তরলজাতীয় খাবার বিশেষ করে স্যুপ, ফলের শরবত, স্যালাইন, লেবুর শরবত ও ডাবের পানি খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। রোগীকে সব সময় মশারির নিচে রাখতে হবে। গলাব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি খেতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর শরীর পাতলা গামছা বা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে ও মাথায় পানি দিতে হবে। শরীর গরম হলেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে ওষুধ খেতে হবে।
জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে কী ধরনের ভাইরাসÑজ্বর নাকি টাইফয়েড, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কোনদিকে মোড় নিচ্ছে। মৌসুমি জ্বর ছোঁয়াচে নয়, তবে রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। মশার ব্যাপারেও এ সময় দরকার বাড়তি সতর্কতা।

শিপন আহমেদ