ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক জোর দেয়। তারই অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার ফলে জরুরিভিত্তিতে জাতীয় গ্রিডে বেশ বিদ্যুৎ যুক্ত হয়। কিন্তু নির্র্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও বারবার মেয়াদ বাড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এখনও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের ফাঁদে বাংলাদেশ!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ৩-৫ বছরের রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২-১৭ বছর। আবার ১৫ বছরের দুটি এসআইপিপির মেয়াদও বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ বছর। আর এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে গচ্চা যাবে বছরে দুই হাজার ৭২৬ কোটি টাকা।

দেশের যেকোনো উন্নয়নের বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সে গুরুত্ব অনুধাবন করেই সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক জোর দিয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয়তার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী নানাভাবে বারবার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিয়েছে। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মুনাফা করা সত্ত্বেও অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ ঠিকমতো পরিশোধ করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।

একসময় দেশে ব্যাপকহারে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎেকেন্দ্রগুলো এ কারণে চালু করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যে চার বা পাঁচ বছরমেয়াদি চুক্তি হবে, সে সময়ের মধ্যে সরকার নিজস্ব বিদ্যুৎে উপদানকেন্দ্র স্থাপন করে ফেলবে এবং সরকার যখন নিজেই দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে, তখন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা ভিন্ন।

বর্তমানে দেশে দৈনিক বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, সরকারের কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা তার চেয়েও অনেক বেশি। অর্থাৎ সরকারি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহƒত হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও সেরকারি বাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদ একের পর এক বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারের উচিত নিজস্ব ব্যবস্থাপনার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং জরুরি ভিত্তিতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া। কেননা ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনলে অনেক বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০