নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারত গত বছরের ১১ জুলাই দুই দেশের বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু লেনদেনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবসা করায় আগ্রহ কম। গত ১৪ মাসে রুপিতে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার রুপি। একই সময়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ ২৬ হাজার রুপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকট যখন শুরু হয় তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের বদলে ভারতের সঙ্গে বিকল্প বাণিজ্যের ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ডলারের পরিবর্তে রুপি ভারতের সঙ্গে ব্যবসা কার্যক্রমে প্রকৃতপক্ষে বড় কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারতের সঙ্গে এ পদ্ধতি চালু করলেও লেনদেনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবসা হয়েছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
এক বছরের বেশি সময় ধরে ইস্টার্ন ব্যাংক, সট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় রুপির মাধ্যমে বাণিজ্য হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার রুপি। আর রপ্তানি হয়েছে ৭৩ লাখ হাজার ৫১ হাজার রুপি। সট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ৪৮ লাখ ১৪ হাজার রুপি আর রপ্তানি হয়েছে ৯৬ লাখ ২৯ হাজার রুপি। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৮১ হাজার রুপি আর রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ কোটি রুপি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রুপির ব্যবসা পদ্ধতি চালু করলেও এক বছর বেশি সময় পার হলেও ব্যবসায়ীরা রুপিতে ব্যবসা করতে আগ্রহী নন কেনÑএ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘যেহেতু আমরা ২০২২ সালে আরবিআইয়ের সঙ্গে রুপির ব্যবস্থা শুরু করেছি এই নীতির ওপর ভিত্তি করে যে, ভারতে রপ্তানি করলে রুপি আয় হবে এবং ভারত থেকে কোনো কিছু আমদানি করতে চাইলে সেই রুপি দিয়েই আমদানির এলসি খোলায় ব্যবহার করা যাবে।
যেহেতু ভারতে রপ্তানি কম হয় তাই রুপিও কম আসে। সে জন্য আমদানির নিষ্পত্তিতে রুপিতে করা যায় না। সে জন্যই লেনদেন কম, ব্যবসায়ীরাও এলসি খুলতে আগ্রহ দেখান না।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে দেশের ব্যাংকে রুপিতে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলোয় রুপি পর্যাপ্ত রুপি নেই। দেশ থেকে রুপিতে রপ্তানি হলেই ব্যাংকগুলোয় রুপি আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানিও কম, তাই রপ্তানির বিপরীতে রুপি আসেও কম; যা করছে তাও যৎসামান্য।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা রুপিতে ব্যবসা কার্যক্রম করতে আগ্রহী নন। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আমদানির ঋণপত্র খোলার জন্য ব্যাংকে পর্যাপ্ত রুপি নেই। আর বৈদেশিক মুদ্রা ডলার দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম সব জায়গাতেই স্বীকৃত ও সহজ। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে তো রুপি নেই, থাকলেও তা কম। তাই ব্যবসায়ীরা রুপিতে ব্যবসা করতে চান না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৩ সালে চালু করলেও বাজারে তা প্রভাব ফেলতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তো বাংলাদেশের একতা বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারত থেকে বছরে আমদানি করা হয় ১৪ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। রুপিতে করতে হলেও তো এই বাণিজ্য একটা সামঞ্জস্যতা আনতে হবে। না হলে রুপি তো পাওয়া যাবে না।’
ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারত ২০২৩ সালের ১১ জুলাই দুই দেশের বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার শুরু করে। ঢাকার একটি হোটেলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুপিতে বাণিজ্য নিষ্পত্তি শুরুর বিষয়টিকে একটি ‘বড় সূচনার প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। উদ্বোধনের সময় আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, ‘বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ঝুড়িতে থাকা ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে রুপির লেনদেন। বড় কোনো যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ এটি। সামনের দিকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে আরও বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে আজকের এই উদ্যোগ।’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।