প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: ভোমরা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের পার্শ্ববর্তী বেসরকারী পার্কিংগুলোতে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদে ভোমরা বন্দরে দ্বিতীয় দিনের মানববন্ধন ও তিন ঘন্টা কর্মবিরতি পালিত হয়েছে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের আয়োজনে রোববার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশে কার্যত বন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ভোমরা স্থলবন্দরের ৮টি সংগঠন এই আন্দোলন ও কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
শনিবার প্রথম দিনের কর্মসূচির পর ওইদিন রাতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় চাঁদা দিয়ে ভোমরা বন্দরে ৫৩ টি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করার অভিযোগে মালামাল খালাস করেনি শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, বন্দর প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছিল। কিন্তু গত ২০২০ এর জুন থেকে ভোমরা বন্দর এর বিপরীতে ঘোজাডাঙ্গা পার্কিং ইয়ার্ডগুলোতে শুরু হয় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি। ভোমরা বন্দরে উভয় দেশের সিএন্ডএফ এজেন্টদের যৌথসভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
এ ব্যাপারে ভোমরা বন্দরে গত সেপ্টেম্বরে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা সিএন্ডএফ কার্গো ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টদের যৌথসভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানানো হয়।পরবর্তীতে একাধিক বার মৌখিক ভাবে জানানো হলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় গত ২৭ জানুয়ারী ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের যৌথ সভায় ২৯ জানুয়ারী থেকে কর্মবিরতী ও মানববন্ধনের মত লাগাতার কর্মসূচী সফল করতে সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেন। একই সাথে শনিবার থেকে সিরিয়াল ছাড়া যে সকল আমদানিজাত পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করবে ঐ সকল পণ্যবাহী ট্রাকের পণ্য খালাশ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে ২৯ জানুয়ারি দুই ঘন্টা কর্মবিরতি ও মানববন্ধন, আজ ৩০ জানুয়ারি তিনঘন্টা কর্মবিরতি ও মানববন্ধন, আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি চারঘন্টা কর্মবিরতি ও মানববন্ধন এবং ১ ফেব্রুয়ারী থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবে বলে জানান ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের আহবায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন।
তিনি আরো বলেন, ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় কাস্টমস্ শুল্ক স্টেশনের পার্শ্ববর্তী বেসরকারি পার্কিংগুলোতে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। যা প্রতি পণ্যবাহী ট্রাকের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। চাঁদা না দিলে সিরিয়ালের জন্য ভারতের ওপারে ২৫ দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে সময় ক্ষেপনের কারনে যেমন বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তেমনি পণ্য নষ্ট হয়ে অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ীরা। যার ফলে ভারত থেকে আনা আমদানিজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় এই বন্দরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকারকরা এ বন্দর ত্যাগ করছে। ফলে ভোমরা স্থলবন্দর থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই স্থলবন্দরটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। তাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই চাঁদাবাজি বন্ধের কোন বিকল্প নেই। চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ, উক্ত বিষয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ট্রাকে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামে দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় ব্যবসায়ীসহ ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, প্রতিদিন ভারতীয় পাশে ঘোজাডাঙ্গা পার্কিং এ সিরিয়াল আগে দেওয়ার জন্য দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে ভারতীয় পারের একটি সিন্ডিকেট, যার যোগসাজশে আছে ভোমরা বন্দরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে বাংলাদেশী আমদানিকারকরা সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি বন্ধে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে চলেছে।