ভারতীয় ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ হোক

 

ভারত ভ্রমণেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা এক বিড়ম্বনার নাম। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় হাইকমিশন বিড়ম্বনা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; কিন্তু তাতে বিড়ম্বনা খুব একটা কমেছে, বলা যাবে না। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ কেনাকাটা, পর্যটন, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি কাজে ভারতে যায়। দুই ঈদের আগে সংখ্যাটি অনেক বাড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর যে সংখ্যক পর্যটক ভারত ভ্রমণ করেন, নানা বিড়ম্বনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নাম সেখানে শীর্ষ দুইয়ে রয়েছে।

ভারতের ভিসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো, তা হচ্ছে ই-টোকেন। অনলাইনে আবেদনের পর আবেদনকারীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনপত্র প্রিন্ট করে কবে জমা দিতে হবে তা নির্ধারণই ছিল ই-টোকেনের কাজ। কিন্তু দিনে বা রাতে কোনো সময়ই সাধারণ মানুষ ই-টোকেন সংগ্রহ করতে পারতো না। দালালদের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করতে হতো। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে একাধিকবার। ভোগান্তিটির ব্যাপারে দীর্ঘদিন আগে হাইকমিশনের মনোযোগ আকর্ষণ করা হলেও সুফল মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন প্রথা বাতিল হয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ই-টোকেনসংক্রান্ত ভোগান্তির অবসান হলো। আমরা এজন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।

ই-টোকেন ছাড়াও বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তি ও নারীদের জন্য সহজে ভিসার ব্যবস্থা করেছে ভারত। এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও বলতে হবে, ভারতের ভিসা সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি এখনও জটিল রয়ে গেছে। বলা হয়েছে, ভারতের ভিসা পেতে আবেদনকারীকে বাস, ট্রেন বা বিমানের টিকিট আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার বা আইভিএসির ওয়েবসাইটে ভিসা পাওয়ার পরই কেবল আবেদনকারীদের ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। দুটি নির্দেশনা সাংঘর্ষিক। কেউ টিকিট করার পর ভিসা না পেলে তাকে গচ্চা দিয়ে টিকিট বাতিল করতে হবে। এ আরেক ভোগান্তি! আবার ভারতের ভিসা আবেদনের সময় ন্যূনতম ১৫০ ডলার এনডোর্স করতে হয় পাসপোর্টে। অন্য কোনো দেশের ভিসা আবেদনে এ ধরনের নিয়ম নেই; কারণ সাধারণত ভিসা পাওয়ার পরই ডলার এনডোর্স করার নিয়ম। ভারতীয় হাইকমিশন চাইলে এসব ভোগান্তি সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো বাদ দিতে পারে।

দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের খাতিরে হলেও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করা প্রয়োজন। ভুটান, নেপাল বা শ্রীলঙ্কা যেতে বাংলাদেশিদের আগে থেকে ভিসা করাতে হয় না; পোর্ট এন্ট্রি ভিসাই যথেষ্ট। ভুটান বা নেপালের বাসিন্দাদেরও ভারত যেতে ভিসা লাগে না, পাসপোর্টই যথেষ্ট। বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের জন্য এ-ধরনের ব্যবস্থা চালুর দিকে এগোতে পারে। দুই দেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্কের সুযোগটুকু সাধারণ মানুষও পাক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০