আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ভবন

ভারতের আপত্তিতে আটকে আছে নির্মাণ

এইচ এম সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দফায় দফায় বাধাবিঘ্ন। মুখ থুবড়ে পড়েছে নির্মাণকাজ। মাথা তুলতে পারছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ভবন। বছর দেড়েকের স্থলে তিন বছর গড়িয়েছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে শুরু থেকেই ভারতীয় পক্ষের বাধাবিঘ্নে এগোচ্ছে না কাজ। 

অন্যদিকে কোনোরূপ বাধাকে তোয়াক্কা না করে জিরো পয়েন্টের দেয়ালঘেঁষে ভারত পুরোদমে তাদের স্থাপনা নির্মাণকাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অফিসের কাজ।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আখাউড়া স্থলবন্দরে ছয়তলা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ভবনের নির্মাণকাজের দরপত্র আহবান করে গণপূর্ত বিভাগ। ছয় কোটি ২৪ লাখ টাকায় এই ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তি হয় ঠিকাদারের সঙ্গে। এরপর কাজ শুরু হলেই বাধা আসে।

কাজের ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রথমে ওই স্থানে কাজ করা যাবে না বলে বাধা দেওয়া হয়। এরপর পাইলিংয়েও আসে বাধা। পাইলিং শেষে বেইজ ও গ্রেড বিমের কাজ শেষে আট ফুট পর্যন্ত কলাম হওয়ার পর আবারও আসে বাধা। তারা ছয়তলা ভবনে আপত্তি জানায়। সর্বোচ্চ ৩৫ ফুট উচ্চতায় ভবন নির্মাণ সীমাবদ্ধ রাখতে বলে। এরই মধ্যে দুতলা পর্যন্ত ছাদ এবং তৃতীয় তলার ওপরে টিন দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়।

তিনি জানান, শর্ত মেনেই নতুন ড্রয়িং-ডিজাইন করে পাঠানোর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাজে সম্মতি দেয়নি। কাজ ঠিকভাবে করতে পারলে ২০১৮ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের কাজে বাধা দিলেও তারা কিন্তু জিরো পয়েন্টে তাদের স্থাপনা নির্মাণকাজ বাংলাদেশের বাধা-বিপত্তি অমান্য করেই চালিয়ে যাচ্ছে।’

আখাউড়া ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, প্রথম ছয়তলা ভবনের প্ল্যান তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এতে তারা আপত্তি দিলে এ বছরের জুন মাসে সংশোধিত প্ল্যান পাঠানো হয়। তাদের শর্ত মেনে ৩৫ ফুট উচ্চতার মধ্যেই কাজ করার প্ল্যান দেওয়া হয়। তারপরও সম্মতি দিতে সময় ক্ষেপণ করছে তারা। কাজ করতে দিচ্ছে না।

এদিকে ভবন উঁচু করাতে আপত্তি থাকায় পাশে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করলে তাতেও বাধা দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ১৬ আগস্ট বিএসএফ জিরোলাইন ক্রস করে এসে কাজে বাধা দেয়। এমনকি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদেরও ভয়ভীতি দেখায়। এরপর বিজিবি জিরো পয়েন্টে তাদের ভবন নির্মাণকাজে আপত্তি দেয়।

ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, ভবনের উচ্চতায় আপত্তি আসায় তাদের দুটি অফিস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের স্থান সংকুলান হবে না বলে ৪০ ফুট পাশে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে কারণে সয়েল টেস্ট ও পুকুরের পাড়ে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ শুরু করলে তারা এসে বাধা দেয়।

ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা বিষয়টি বিজিবিকে জানালে তারা বিএসএসের সঙ্গে কথা বলে। বিএসএফ ওপরের নির্দেশে বাধা দিচ্ছে বলে তাদের জানায়। সর্বশেষ বাধার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএসফ) ১২০ ব্যাটালিয়নের কমাডেন্ট, আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের ম্যানেজার ও আখাউড়া ইমিগ্রেশন ইনচার্জকে চিঠি দেন।

এই চিঠিতে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়। তাতে ভবনটি বর্তমানে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে, তার বিবরণও তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, ভবনটির সর্বোচ্চ উচ্চতা হবে ৩৫ ফুট এবং এর ছাদ ঢালু থাকবে। বেজমেন্ট থাকবে না। বিল্ডিংটির মোট আয়তন ১৩ হাজার ৬২০ বর্গফুট। এর মধ্যে ১০ হাজার ৮২০ বর্গফুট ভবনের ফাউন্ডেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুই হাজার ৮০০ বর্গফুট পুকুরে থাকায় ভবনটি সংরক্ষণে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের জন্যে পুকুরের মধ্যে সয়েল টেস্ট করা প্রয়োজন। এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্টের দেয়ালঘেঁষেই স্থাপনা নির্মাণ করছে ভারত। সূত্র জানায়, সেখানে বিএসএসের ব্যারাক ও কনফারেন্স রুম বানানো হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এই কাজে বিজিবি বাধা দিলেও তা গ্রাহ্য করছে না ভারতীয় পক্ষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি দ্রæত কাজটি শেষ করতে। এতে দু দেশের নাগরিকদের কষ্ট কমবে। প্রথমে আমরা ছয়তলা করতে চেয়েছিলাম। পরে তাদের কথামতো আমরা দোতলার প্ল্যান দিই। দু’মাস পেরিয়ে গেছে আমরা পাসকৃত প্ল্যান ড্রয়িংসহ তাদের দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোনো সাড়া নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গেলে বলে এটা দিল্লি থেকে অ্যাপ্রæভড হয়ে আসেনি। আপনারা কাজ বন্ধ রাখেন। তাদের চাহিদামতো সব কাগজপত্র আমরা দিয়েছি। সীমান্তের এই কাজের বিষয়ে আমাদের কথা বলারও সুযোগ নেই। বিজিবি ও বিএসএফ এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দেড়শ গজের মধ্যে কোনো কাজ করতে হলে ডিজাইন-নকশা পাঠাতে হয়। এ বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যাতে তাড়াতাড়ি সম্মতি দিয়ে দেন। আর জিরো পয়েন্টের দেয়ালঘেঁষে বিএসএফ যে স্থাপনা করছে, সেটি আর এটি এক নয়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০