Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 3:59 pm

ভারতের ঋণে ১১০০ বাস-ট্রাক কেনায় অস্বস্তিতে বিআরটিসি

ইসমাইল আলী: রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ও দূরপাল্লার সেবা উন্নয়নে ভারত থেকে ৬০০ বাস কিনবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। একইসঙ্গে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে ৫০০টি ট্রাকও কিনবে সংস্থাটি। ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণে (এলওসি) এসব বাস-ট্রাক কেনায় দরপত্র চূড়ান্ত করা হয় ২০১৬ সালে। তবে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে দিয়েছে দেশটির এক্সিম ব্যাংক। এতে নিম্নমানের বাস-ট্রাক সরবরাহের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, শর্তের জটিলতায় এলওসির আওতায় এক হাজার ১০০ বাস-ট্রাক কেনা আটকে আছে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। যদিও প্রকল্প দুটি মেয়াদ মাত্র চার মাস অবশিষ্ট রয়েছে।

তথ্যমতে, ২০১৬ সালের আগস্টে ভারতের ঋণে ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কেনার প্রকল্প দুটি অনুমোদন করা হয়। এগুলো কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ ও ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বাস-ট্রাকের সঙ্গে এগুলোর জন্য ১০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশও কেনা হবে। ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্প দুটি শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে।

সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে বাস ও ট্রাকগুলো কেনা হবে, যাতে শুধু ভারতের কোম্পানিগুলোই অংশগ্রহণ করতে পারবে। বাস কেনায় ভারত সরকার ঋণ দেবে ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ ও ট্রাকে ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।

সম্প্রতি এলওসিতে বাস-ট্রাক কেনা প্রকল্প দুটির অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এর তথ্যমতে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্প দুটি অনুমোদন করা হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। এরপর দরপত্র দলিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ভারতের এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দরপত্র দলিলের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনসহ টেন্ডার ডকুমেন্টসে পরিবর্তন করে ফেরত পাঠায় এক্সিম ব্যাংক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক্সিম ব্যাংকের কিছু শর্তের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ একমত পোষণ করে। কিন্তু দেশের চাহিদা অনুযায়ী একনেক কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টসসহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদিত হওয়ায় এটি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এক্সিম ব্যাংক কর্তৃক টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনের পরিবর্তনের যে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী বাস-ট্রাক হবে নিম্নমানের। এজন্য একনেক কর্তৃক অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন অপরিবর্তিত রেখে পুনরায় দরপত্র দলিল ও দরপত্র বিজ্ঞপ্তি এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়। গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি ইআরডির মাধ্যমে এ তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এক্সিম ব্যাংকের উত্তর মেলেনি বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা শেয়ার বিজকে বলেন, এক্সিম ব্যাংক যে শর্ত দিয়েছে তাতে ভারতের ছোটখাটো কোম্পানি দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের বাস-ট্রাক হবে তুলনামূলক নিম্নমানের । ফলে সেগুলোর দামও পড়বে কম। এসব কোম্পানির কোনো একটি বাস-ট্রাক সরবরাহ করলে সেগুলো নিম্নমানের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তখন বাস-ট্রাকের বিশাল এ বহর নিয়ে বিপাকে পড়বে বিআরটিসি। তাই এক্সিম ব্যাংকের শর্ত মেনে নেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠি দেওয়া হলেও তার উত্তর এখনও দেয়নি এক্সিম ব্যাংক। ফলে বাস-ট্রাক কেনার প্রক্রিয়া আটকে আছে।

উল্লেখ্য, ২০১০-১৩ পর্যন্ত সময়ে বিআরটিসিকে বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি বাস কিনে দেয় সরকার। তবে নিম্নমানের বাস-ট্রাক কেনা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দ্রুতই এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটির বহরে এক হাজার ৪০০-র বেশি বাস রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি বিকল হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন ডিপোতে।

তথ্যমতে, ভারত থেকে ৬০০ বাস কেনার প্রকল্পের আওতায় ৩০০ দ্বিতল বাস, ১০০ এসি দূরপাল্লার বাস, ১০০ এসি সিটি বাস ও ১০০ নন-এসি সিটি বাস সংগ্রহ করা হবে। এগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ভ্যাট ও কর ছাড়া যথাক্রমে ৭২ লাখ, ৭০ লাখ, ৬৯ লাখ ও ৪২ লাখ টাকা। আর ট্রাক কেনার প্রকল্পের আওতায় ১৫ টনের ৩৫০টি ও ১০ টনের ১৫০টি ট্রাক রয়েছে। এগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ভ্যাট ও কর ছাড়া যথাক্রমে ৩০ লাখ ও ২৬ লাখ টাকা।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের বহরে বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক রুটে আমরা বাস চালাতে পারছি না। নতুন বাস বহরে যুক্ত হলে সচল বাসের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক রুটে পুনরায় বাস চালু করা যাবে। এছাড়া বহরে ট্রাকের সংখ্যাও অনেক কম। নতুন ট্রাকগুলো যুক্ত হলে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাবে।’