Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 5:22 am

ভারতের ঋণ সহায়তায় রেলের চার প্রকল্পের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের ঋণ সহায়তায় নির্মিত দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে সঙ্গে খুলনা-কলকাতা রুটের নতুন ট্রেন ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ও ঢাকা-কলকাতা রুটের ‘মৈত্রী এক্সপ্রেসের’ জন্য উভয় প্রান্তে বহির্গমন এবং কাস্টমস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চিতপুরে কলকাতা রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের উদ্বোধন করা হয়েছে।

ঢাকায় গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ও দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নরেন্দ্র মোদি গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ চার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ভারত ও অন্যান্য নিকট-প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাস করতে পারি এবং জনগণের কল্যাণে গঠনমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি।’

১৯৬৫ সালের আগে এ দুই ভ‚খণ্ডের মধ্যে যেসব পথে যোগাযোগ ছিল, তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ভারতের ঋণ সহায়তায় রেলের চার প্রকল্পের উদ্বোধন কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনার ওপর জোর দেন।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের এই বন্ধন প্রটোকলের মধ্যে রাখতে চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বস্ত সহযোগী হতে পারা ভারতের জন্য আনন্দের। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ যত বৃদ্ধি পাবে, দুদেশের তত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হবে। আমাদের দু’দেশের মৈত্রী ও বন্ধন আরও গতি পাবে।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ায় তার কার্যালয় নবান্ন থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দিল্লিতে মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

রেলসেতু উদ্বোধনের সময় ভৈরব থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। চিতপুরে কলকাতা রেলস্টেশনের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে ছিলেন ভারতীয় রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করা হয় দিল্লি থেকে।

তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভৈরব ও তিতাসের পুরোনো সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। ভারতীয় ঋণে সেখানে নতুন দুটি সেতু হওয়ায় ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করতে পারবে এবং যাতায়াতের সময় ১৫ মিনিট কমে আসবে।

২০১০ সালের নভেম্বরে একনেকের অনুমোদন পাওয়া এ দুটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ভারত ৮২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। আশুগঞ্জ ও ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ডুয়েলগেজ রেলসেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৮২ দশমিক ২ মিটার। আর দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু ২১৮ মিটার দীর্ঘ।

এদিকে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে বা আসার পথে এতদিন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হতো চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও মুর্শিদাবাদের গেদে সীমান্তে। এখন থেকে বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে ঢাকা ছাড়ার আগেই। গন্তব্য শেষে কলকাতায় হবে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন। তাতে যাত্রার সময় কমে আসবে তিন ঘণ্টা। যাত্রীদের ভোগান্তিও কমবে। ৪৫৬ জন করে যাত্রী বহন ক্ষমতার মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে শুক্র, শনি, রবি ও বুধবার।  আর কলকাতা থেকে শুক্র, শনি, সোম ও মঙ্গলবার। শুক্রবার থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস নতুন সূচিতে চলবে। সকাল সোয়া ৮টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কলকাতায় পৌঁছাবে স্থানীয় সময় বিকাল ৬টা ১০ মিনিটে। আর কলকাতা থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রওনা হয়ে বিকাল ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাবে।

আর খুলনা-কলকাতা রুটের নতুন ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস আপাতত প্রতি বৃহস্পতিবার চলবে। ১৫৬ আসনের এ ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থ ভাড়া দেড় হাজার টাকা, আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের ভাড়া এক হাজার টাকা। বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া ১টায় খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হবে বন্ধন। বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে যশোরের বেনাপোল অতিক্রম করে কলকাতায় পৌঁছাবে ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। কলকাতা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। খুলনায় পৌঁছাবে বেলা ১২টা ৫ মিনিটে। বন্ধন এক্সপ্রেস চালুর মধ্য দিয়ে খুলনা-কলকাতা রুটে ৫২ বছর পর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে এ পথে ট্রেন চললেও ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তা বন্ধ হয়ে যায়।