Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:21 am

ভারতের পার্লামেন্টে রাহুল গান্ধীকে অযোগ্য ঘোষণা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে লোকসভা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাহুলকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন গুজরাটের সুরাটের দায়রা আদালত। আর দুই বছর দণ্ড পাওয়ায় পার্লামেন্টের সদস্যপদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার লোকসভা সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। খবর এনডিটিভির।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নকক্ষের সেক্রেটারি জেনারেল উৎপল কুমার সিং স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০২ (১) (ই) অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ এর ৮ অনুচ্ছেদের শর্ত অনুসারে গান্ধী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে লোকসভার সদস্যপদ থেকে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১-এর ৮(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো সদস্য যেকোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কমপক্ষে ২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি তখনই অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ায় রাহুল অন্তত আগামী ৬ বছর কোনো নির্বাচনে লড়তে পারবেন না।

এর আগে সকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লোকসভায় যান রাহুল গান্ধী। এ সময় লোকসভার অধিবেশনে ব্যাপক হট্টগোল হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে দুপুর পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরপর রাহুল চলে যান। কেরালার ওয়েনাড লোকসভা আসনের সদস্য রাহুল।

বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মনীশ তেওয়ারি এ সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছেন। এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘লোকসভা সচিবালয় কোনও এমপিকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে না। রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি করতে হবে।’

কংগ্রেসের আরেক সিনিয়র সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো কিছু না। টুইটে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপটি দেখে আমি হতবাক। এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।’

বিজেপি বলছে, রাহুল ‘চোর’ মন্তব্য দিয়ে ওবিসি সম্প্রদায়কে অপমান করেছে। পরে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, ‘তার দল যখন জনগণের টাকা নিয়ে কে পালিয়েছে তাদের খুঁজছে, তখন বিজেপি মূল ইস্যু থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টায় এসব করছে।’

এদিকে এই ঘটনায় এদিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা। ঘটনা জানাজানি হতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ করেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সরব হয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে পরিস্থিতি আঁচ করে আগে থেকেই বাম, আপ, জেডিইউ, ডিএমকেসহ প্রায় ১২টি দলের সঙ্গে শুক্রবার সকালেই বৈঠক সারেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে ১৪ বিরোধী দল জোটবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করে এদিন। বাম, জেডি(ইউ), ডিএমকের পাশাপাশি বৈঠকে ছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)-ও। এর পরে সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান তারা।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় যুদ্ধবিমান রাফাল কেনাবেচায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল কংগ্রেস। সে সময় রাহুল স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায় (পাহারাদারই চোর)।’ একই বছর কর্ণাটকে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, চোরদের পদবি কেন ‘মোদি’ হয়।

ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ললিত মোদি ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে টাকা শোধ না করে পলাতক নীরব মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, কেন সব চোরের পদবি মোদি। এরপর পূর্ণেশ মোদি নামে গুজরাট বিজেপির এক নেতা সুরাত আদালতে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওই মামলায় গতকাল রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের আদালত। তবে, সাজা দিলেও রাহুলকে এ মামলায় জামিন দেওয়ার পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়েছে আদালত।