Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:00 am

ভারতের ফুল ব্যবসায়ীদের নজর তুর্কিয়েতে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতের ফুল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা এই খাতের বাণিজ্য বাড়ানো ও আমদানির জন্য তুর্কিয়ের বাজার ধরার চেষ্টা করছেন। ইন্ডিয়ান ফ্লোরিস্টস কাউন্সিলের (জিএফসিআই) প্রধান শ্রীকান্ত বোল্লাপেল্লি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর: ডেইলি সাবাহ।

আমদানির পাশাপাশি ভারতের ফুল ব্যবসায়ীরা মূলত তুর্কিয়ের ফুল ব্যবসার প্রধানকেন্দ্র আন্টালিয়ায় তাদের পণ্যের বাজারজাত করতে চান। ভূমধ্যসাগরীয় শহরটি তুর্কিয়ের প্রধান ফুল উৎপাদনকেন্দ্র।

বোল্লাপেল্লি ও জিএফসিআইয়ের সদস্যরা সম্প্রতি আন্টালিয়া কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এটিবি) চেয়ারপারসন আলি কানদির ও তার দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফরকালে ব্যবসায়িক বক্তৃতায় বোল্লাপেল্লি জানান, তারা ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলে চাষ করেন এবং ক্রমবর্ধমান জনসাধারণের চাহিদা মেটাতে ফুল চাষ বাড়ছে। ক্রেতার চাহিদা পূরণের জন্য তারা তুর্কিয়ে থেকে ফুল আমদানি বাড়াতে চান।

এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, তুর্কিয়ের ফুল উৎপাদন ও বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য তারা আন্টালিয়ায় সফর করছেন এবং এই বিষয়ে সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায় তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শোভাবর্ধক উদ্ভিদ নিয়ে তারা সমস্যা পোহাচ্ছেন এবং সমাধানের লক্ষ্যে নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কানদির জানান, ফুল উৎপাদন ও শোভাবর্ধক উদ্ভিদ নিয়ে তাদের বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছে এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি বলেন, আন্টালিয়ার ফুল সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। এখানে সারাবছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ফুল উৎপন্ন করা হয়। তিনি জোর দিয়ে এই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন, ফুল রপ্তানির জন্য বছরজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ।

কানদির আরও জানান, তুর্কিয়ের গ্রিনহাউস কাটা ফুল উৎপন্নের জন্য আন্টালিয়ায় ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে, যেখানে দেশটির মোট কাটা ফুলের ৪৫ শতাংশ উৎপন্ন হয়। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, কাটা ফুল বিক্রিতে আন্টালিয়া এগিয়ে। শোভাবর্ধক উদ্ভিদ রপ্তানি করে বছরে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন লিরা) আয় করে তুর্কিয়ে, যার অর্ধেক আসে আন্টালিয়া থেকে। এ হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এটি একটি রেকর্ড বলে জানান, অরনামেন্টাল প্লান্টস অ্যান্ড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইসমাইল ইলমাজ।

ইলমাজ বলেন, মহামারিকালে তুর্কিয়ে ৮৩টি দেশে ফুল রপ্তানি করে। ভৌগোলিক কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে তুর্কিয়ে, যেখান থেকে প্রতিযোগী তুলনায় সহজে ফুল রপ্তানি করতে পারে দেশটি। ২৫ বছর আগে শোভাবর্ধক ফুল রপ্তানি শুরু করি।

খাত-সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সালে এ খাত থেকে ১৮ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে ২০ শতাংশ রপ্তানি বাড়াতে হবে। গত বছর ১২ শতাংশ বাড়ে ফুল রপ্তানি। তুর্কিয়ে চলতি বছর ভ্যালেনটাইন্স ডে উপলক্ষে ২৪টি দেশে সাড়ে ৬ কোটি কাটা ফুল রপ্তানি করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ফুলের রপ্তানি তুলনামূলক বেশি হয়। এই ফুলের বেশির ভাগ পাঠানো হয় ইউরোপের দেশগুলোয়, যা থেকে আয় হয় প্রায় ১ কোটি ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল রপ্তানি করা হয় নেদারল্যান্ডসে। দেশটি নিজেদের স্থানীয় বাজারের জন্য ফুল আমদানি করে না। মূলত ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় ও বিশ্বের অন্য অঞ্চলে তারা তুর্কিয়ের ফুল সরবরাহ করে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন।

সর্ব সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ায় উড়োজাহাজভর্তি ফুল পাঠায় তুর্কিয়ে। এই অনুষ্ঠানে ৯০ শতাংশ ফুলের জোগানদাতা ছিল তুর্কিয়ে। কর্তৃপক্ষ ট্রাকের পরিবর্তে উড়োজাহাজে করে অনুষ্ঠানের আগে ফুল সরবরাহ করে। এতে ছিল ৫ লাখের বেশি ফুল, যার ওজন ছিল ১৩ মেট্রিক টন।

এ খাতের কর্মীরা দিনের শুরুতে কর্মস্থলে চলে আসেন। তারা মূলত লাল ফুল সংগ্রহ করেন এবং গ্রিনহাউস থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ফুল সরবরাহ করেন।