শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফের পতন দেখা গেল ভারতের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) পক্ষ থেকে প্রকাশিত শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফরেক্স রিজার্ভে গচ্ছিত সব সম্পদের ক্ষেত্রে পতন দেখা গেছে। ১৯ জানুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে কোন সম্পদের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ পতন হয়েছে, তা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
গত শুক্রবার এই তথ্য প্রকাশ করে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহে সম্পদের পরিমাণ আবার বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে স্বস্তি ফিরেছিল দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চলতি সপ্তাহে আবার পতন দেখা গেছে ফরেক্স রিজার্ভে গচ্ছিত সম্পদের মোট পরিমাণে। ফলে ফের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারা।
পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি মাসের ১৯ তারিখে শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গচ্ছিত সম্পদের পরিমাণ কমেছে ২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন বা ২৮০ কোটি ডলার। ফলে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গচ্ছিত সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৬২৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা প্রায় ৬২ হাজার ৬১০ কোটি ডলারে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে আরবিআইয়ের পক্ষ থেকে থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুসারে ফরেক্স রিজার্ভে গচ্ছিত মোট সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১৬০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১২ জানুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে এই বৃদ্ধি দেখা যায়। ফরেক্স রিজার্ভের সম্পদ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সেই সময় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল।
বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন, চলতি সপ্তাহেও এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু ১৯ তারিখ শেষ হওয়া সপ্তাহে আবার সম্পদ কমে যাওয়ার কারণে ফের কিছুটা দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পেল।
আরবিআইয়ের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯ তারিখে শেষ হওয়া সপ্তাহে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে গচ্ছিত থাকা ফরেন কারেন্সি অ্যাসেটসের (এফসিএ) পরিমাণ ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১৬০ কোটি ডলার কমে গেছে। ফলে বর্তমানে ফরেক্স রিজার্ভে গচ্ছিত মোট বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। এক ধাক্কায় এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পতন দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফরেক্স রিজার্ভে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদের পরিমাণ রিজার্ভে থাকা সব সম্পদের মধ্যে সর্বাধিক। সেই কারণে এর গুরুত্বও ব্যাপক।
এদিকে পতন দেখা গেছে ফরেক্স রিজার্ভে গচ্ছিত স্বর্ণের রিজার্ভেও। ওই একই সপ্তাহে মোট স্বর্ণ রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার কমে গেছে। বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মোট ৪৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ রিজার্ভ রয়েছে। একই ভাবে ফরেক্স রিজার্ভের থাকা স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের পরিমাণও ৪৭৬ মিলিয়ন কমে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে।
এই পতনের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ভারতের রিজার্ভের অবস্থান ১৮ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে। বর্তমানে আইএমএফে দেশটির রিজার্ভের অবস্থান ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
২০২৩ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছর ভারতের রিজার্ভ বাড়লেও ২০২২ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার কমেছিল। ২০২১ সালে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। তখন দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬৪৫ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
তবে গত বছরের আগষ্টে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নামে। ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান ধরে রাখার জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করার কারণে রিজার্ভ কমে যায়। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৩০ কোটি ডলার কমে। ফলে ১৮ আগস্ট নাগাদ দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।