শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে চালের স্বাভাবিক উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে নতুনভাবে খাদ্য সংকটে পড়তে পারে বিশ্ব। খবর: ব্ল–মবার্গ।
চলতি বছর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশটিতে চাষাবাদের পরিমাণ কম হচ্ছে। এ কারণে চালের স্বাভাবিক উৎপাদন হুমকিতে পড়েছে। তাই নতুন করে খাদ্য সংকটে পড়তে পারে বিশ্ব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদপণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে।
ভারতে খাদপণ্যের দামের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। বেশ কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে গঙ্গা অববাহিকায় বৃষ্টির অভাবে চলতি মৌসুমে ধান চাষের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে অন্যতম হলো পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ। ভারতের মোট চাল উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ আসে এ দুটি রাজ্য থেকে। উত্তর প্রদেশের কৃষক রাজেশ কুমার সিং জানান, জুন ও জুলাইয়ে বৃষ্টি না হওয়ায় তিনি তার সাত একর জমির মাত্র অর্ধেক জমিতে ধান রোপণ করেছেন। পরিস্থিতি সত্যিই অনিশ্চিত বলে জানান তিনি।
চালের উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। কারণ উৎপাদন কম হলে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি দাম আরও বাড়বে। উৎপাদনের শঙ্কার মধ্যে ভারতে চালের দাম বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ছত্তিশগরে গত দুই সপ্তাহের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। তাছাড়া কড়াকড়ি আসতে পারে রপ্তানিতেও। রপ্তানি খরচও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কারণে বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বৈশ্বিক চালের ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। দেশটির সরকার অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় এরই মধ্যে গম ও চিনিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
ভারতসহ এশিয়ার চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোয় বর্ষাকাল গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার অগ্রগতির ওপর অনেকটা নির্ভর চাল উৎপাদনের সাফল্য। তবে প্রাক-বর্ষা মৌসুম অর্থাৎ ধান রোপণের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কমে গেছে চাষাবাদ।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী চাল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ ভারতের দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে। মূল্যস্ফীতিতে ধুঁকতে থাকা দেশটি এরই মধ্যে স্থানীয় মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য গম ও চিনি রপ্তানিতে হ্রাস টেনেছে। নতুন করে সেই তালিকায় চালও যুক্ত হলে ভোগান্তিতে পড়বে ভারতীয় চালের ভোক্তারা। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে চাল রপ্তানি করে থাকে ভারত। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, চীন, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ তার বৃহত্তম গ্রাহক।
ভারতের চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্পঞ্জ এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মুকেশ জৈন জানান, বৃষ্টির ঘাটতি এবং বাংলাদেশের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ের মতো প্রধান উৎপাদক রাজ্যগুলোয় গত দুই সপ্তাহে চালের মূল্য বেড়েছে ১০ শতাংশ। রপ্তানি মূল্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি টন ৩৬৫ ডলার থেকে বেড়ে ৪০০ ডলারে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
নোমুরা হোল্ডিংস ইনকরপোরেটেডের অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মার মতে, বৃষ্টিপাতের ভৌগোলিক বৈষম্য যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতিকে।
গত জুনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মাঝে চলমান বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে ভারত চালের রপ্তানির লাগাম টানতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়ালেও তা নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক ভারতে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং রপ্তানি সীমিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। বিশ্বজুড়ে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১৩ মে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। রপ্তানি নিষিদ্ধ করলেও দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশ, যারা খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে, তাদের জন্য জিটুজি ভিত্তিতে সরবরাহ চালু রাখে। এরপর চাল রপ্তানিতে এশিয়ার এই দেশটি বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।