শেয়ার বিজ ডেস্ক: ডিসকাউন্ট এবং শুল্ক নিয়ে অসাধুতার অভিযোগের জন্য জার্মানির ডিএইচএল, মার্কিনভিত্তিক ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস এবং ফেডেক্সের মতো বৈশ্বিক ডেলিভারি সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ ইউনিটগুলোর তদন্ত করছে ভারতের দুর্নীতি দমন সংস্থা। খবর রয়টার্সের।
লজিস্টিক শিল্পে এ ধরনের তদন্ত এটিই সর্বশেষ। ২০১৫ সালের দিকে এরকম কিছু তদন্ত করা হয়েছিল। তখন ফ্রান্স ফেডেক্স ও ডিএইচএলসহ ২০টি কোম্পানির ওপর গোপনে মূল্য বৃদ্ধির জন্য ৭৩৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা আরোপ করেছিল, রয়টার্স রিপোর্ট করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে, ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিআই) কয়েক হাজার ই-মেইল পর্যালোচনা শুরু করেছে। কারণ, সরকারি নথি ও তিনটি সূত্র অনুসারে এ কমিশন সংস্থাগুলোর বিমানবন্দর পরিষেবার ফি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে ভারতীয় প্রকাশকদের ফেডারেশনের (এফআইপি) অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত শুরু হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ডিএইচএল, ফেডেক্স, ইউপিএল ও দুবাইয়ের অ্যারামেক্স আরও কয়েকটি দেশীয় সংস্থার সঙ্গে একত্রে ফি নির্ধারণ করছে এবং গ্রাহকের ছাড় নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রমাণিত হলে এই ধরনের কাজে ভারতীয় অসাধুতা আইন লঙ্ঘন করা হয়।
নথিতে বলা হয়েছে, প্রকাশক বলেছেন, কোম্পানির মালিকরা বিমানবন্দরগুলোতে প্রদত্ত কুরিয়ার ও স্টোরেজ পরিষেবাগুলোতে ভলিউম, চার্জ এবং ছাড় সম্পর্কিত বাণিজ্যিকভাবে সংবেদনশীল তথ্য বিনিময় করেছেন, নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি বিবৃতিতে, ফেডেক্স স্পষ্টভাবে অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছে। তবে কোম্পানিটি রয়টার্সকে বলেছে, তারা সিসিআই-এর সঙ্গে সহযোগিতা করছে। ফেডেক্স আরও জানায়, এটি আইন মেনে চলতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। ডিএইচএলও বলেছে, তারা সম্পূর্ণভাবে তদন্তে সহযোগিতা করছে এবং সর্বদা আইন মেনে চলেছে।
ইউপিএস বলেছে, এটি একটি ‘চলমান, অ-সার্বজনীন তদন্ত’ হওয়ায় এর বিশদ ব্যাখ্যা দিতে পারছে না তারা। তবে নজরদারির সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
আরামেক্স ও ভারতীয় অভিযোগকারী রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
রয়টার্সই প্রথম এ তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট করে। সিসিআই মূল্যের যোগসাজশ ও কার্টেল ক্রিয়াকলাপের অভিযোগ জড়িত দুর্নীতির মামলাগুলোর গোপনীয় বিবরণ রাখতে থাকে।
কার্টেল ক্রিয়াকলাপ প্রমাণিত হলে, কোম্পানির দ্বারা নির্ধারিত ফির জন্য প্রতি বছরে মুনাফার তিনগুণ পর্যন্ত বা লঙ্ঘনের প্রতি বছরের জন্য বার্ষিক রাজস্বের ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হয়, সে পরিমাণ জরিমানা হতে পারে।
অনেক কোম্পানি কুরিয়ার মার্কেটে সম্ভাবনার ব্যাপারে উৎসাহী। এক্সপ্রেস ও পার্সেল ডেলিভারি পরিষেবা প্রতি বছর ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৯ সালের মধ্যে ১৮.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, গবেষণা সংস্থা মর্ডর ইন্টেলিজেন্স বলছে।
২০২২ সালে, ডিএইচএল বলেছিল, এটি ভারতে তার গুদামজাতকরণ ও কর্মী সম্প্রসারণের জন্য ৫৪৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। একে একটি ‘অগ্রাধিকার বাজার’ বলে অভিহিত করে সংস্থাটি। গত মাসে একটি ফেডেক্স ইউনিট একটি প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
নথি অনুযায়ী, তদন্ত করা হচ্ছে এমন বেশিরভাগ সংস্থাই অভিযোগ করা অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত প্রধান নির্বাহীদের চিহ্নিত করার পরই পাঠানো নোটিশের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওয়াচডগকে ই-মেইল জমা দিয়েছে।
ওয়াচডগের ২০২২ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যে মিটিংয়ে কুরিয়ার সংস্থাগুলোর বিমানবন্দর পরিষেবার জন্য চার্জ নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তাতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার একটি চুক্তি করা হয়েছিল, নথিতে পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী গোষ্ঠীটি আরও অভিযোগ করেছে, কিছু কোম্পানি জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামকে উপলক্ষ করে ১৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সারচার্জ নির্ধারণ করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিকে ঘিরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সময় যখন এই দামগুলো হ্রাস পেয়েছে তখন তারা চার্জ কমায়নি।