শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাপানের সুজুকি মোটর ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) তৈরির জন্য ভারতে ১৫০ বিলিয়ন ইয়েন বা ১০ হাজার ৪৪০ কোটি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর: রয়টার্স।
গতকাল প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় শাখা জানায়, জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে এবং বড় শহরগুলো থেকে পরিবেশ দূষণ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত শনিবার ভারতে আসেন। এদিনই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আগামী পাঁচ বছরের বিনিয়োগ নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি চার হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন।
জনবহুল ও বিশাল ভোক্তাশ্রেণির কারণে একাধিক বহুজাতিক সংস্থা ভারতের বৈদ্যুতিক বাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এজন্য তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। জাপানের নিক্কেই বিজনেস ডেইলির একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সুজুকি মোটর ভারতের গুজরাটে তাদের মারুতি সুজুকির কারখানায় ১৫০ বিলিয়ন ইয়েন বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ১০ হাজার ৪৪০ কোটির বেশি। তা থেকে তিন হাজার ১০০ কোটি রুপি দিয়ে ইভি গাড়ির উৎপাদন বাড়ানো হবে, আর সাত হাজার ৩০০ কোটি রুপি এসব যানের জন্য কারখানা নির্মাণে ব্যয় করা হবে।
সুজুকির উদ্দেশ্য, ভারতের মাটিতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ও তার ব্যাটারির উৎপাদন বাড়ানো। সুজুকির প্রেসিডেন্ট তোশিহিরো সুজুকি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কার্বন নিঃসরণমুক্ত ছোট গাড়ি তৈরি করা।
মারুতি সুজুকি ভারতের বৃহত্তম যাত্রীবাহী গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের মারুতি সুজুকি আলতোর মতো তুলনামূলক কম দামি (সস্তা) চার চাকার গাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে এস-ক্রস ও এক্সএল৬-এর মতো দামি মডেলও রয়েছে। ফলে তারা ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণ শুরু করলে এসব গাড়ির দাম ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতের নাগালের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আগামী কয়েক বছরে ভারতের ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে ধারণা সুজুকির। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ব্যবসায় উন্নতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও কেনিচি আয়ুকাওয়া বলেন, গুজরাটে তাদের কারখানাটিকে ইভি হাব হিসেবে গড়ে তোলা হতে পারে। যদিও বৈদ্যুতিক গাড়ির ডেভেলপমেন্ট কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বিস্তারিত জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে ভারতের বাজারে দুই ও তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ির চাহিদা সর্বাধিক। আর ইলেকট্রিক চার চাকার বাজারে একাধিক সংস্থার প্রিমিয়াম গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ির দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে জানায় গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে নেক্সন ইভি ও টাইগর ইভির মাধ্যমে ভারতের চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টাটা মোটরস। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ও মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিভিএস মোটরও ইভি তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এখনও দেশটিতে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম প্রচলিত জ্বালানিনির্ভর গাড়ির তুলনায় বেশি। এ প্রসঙ্গে মারুতি সুজুকির ভারতীয় শাখার চেয়ারম্যান আরসি ভার্গভ বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে ভারতে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়।
প্রসঙ্গত, মারুতি সুজুকি ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের প্রথম ব্যাটারিচালিত গাড়ি লঞ্চ করবে বলে জানিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সুজুকি ও টয়োটা যৌথভাবে মারুতির প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর কাজ করছে, যার কোডনাম ওয়াইওয়াই৮। এটি একটি ছোট এসইউভি গাড়ি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।