ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি দাম আদানির

ইসমাইল আলী: ২০১৩ সালে ভারত থেকে প্রথম বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে ২৫০ মেগাওয়াট আমদানি করা হলেও, পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে গত মার্চ থেকে যুক্ত হয়েছে আদানির বিদ্যুৎ আসা। যদিও এটাকে আমদানির পরিবর্তে আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) বলছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে আদানির বিদ্যুতের দাম ভারত থেকে আমদানি করা সব কেন্দ্রের চেয়ে বেশি পড়ছে।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিলের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত এপ্রিলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে ব্যয় হয় ইউনিটপ্রতি আট টাকা ১৩ পয়সা। অথচ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে ব্যয় হয় ১৩ টাকা ৪৭ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুতের দাম ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের গড় দামের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি।

পিডিবির তথ্যমতে, ভারতের এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভেপর নিগম লিমিটেড) থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এপ্রিলে এ কেন্দ্রটি থেকে ১৫ কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। এতে ব্যয় হয় ৭৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে চার টাকা ৮৪ পয়সা। এনভিভিএনের বাহারামপুর কেন্দ্র থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ। এপ্রিলে ওই কেন্দ্রটি থেকে ১৯ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। এজন্য বিল দিতে হবে ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে সাত টাকা ৫৬ পয়সা।

পিটিসি (ইন্ডিয়া) থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে বাংলাদেশ। এপ্রিলে এ কেন্দ্রটি থেকে ১৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। এতে ব্যয় হয় ১২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে আট টাকা ৭৯ পয়সা। এনভিভিএনের ত্রিপুরা কেন্দ্র থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। গত এপ্রিলে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ এসেছে আট কোটি ৭৯ লাখ ৪৩ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ৮২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ৯ টাকা ৩৬ পয়সা।

এর বাইরে ভারতের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র সেম্বকর্প এনার্জি থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এপ্রিল মাসে ওই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ আসে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৬ হাজার মেগাওয়াট। এতে ব্যয় হয় ১৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ১১ টাকা এক পয়সা। সব মিলিয়ে ভারত থেকে এপ্রিলে ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এতে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৫৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে গড়ে আট টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে এপ্রিলে শুধু প্রথম ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এতে এপ্রিলে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হয় ৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয় ৫৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৪৭ পয়সা।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, আদানির কেন্দ্রটির সঙ্গে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির তুলনা করা উচিত নয়। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লাচালিত। আর আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসভিত্তিক। গ্যাসের উৎপাদন ব্যয় কয়লার চেয়ে কম হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আইপিপি, যা বাংলাদেশ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ভারতে স্থাপন করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই আদানির কেন্দ্রের সব ধরনের খরচ পিডিবিকে বহন করতে হবে।

তারা আরও জানান, আদানির কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত পরিমাণের (৩৪%) চেয়ে কম বিদ্যুৎ কিনলে বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু ভারত থেকে আমদানিকৃত কেন্দ্রের ক্ষেত্রে খরচের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। তবে প্রয়োজন না থাকলে একটা নির্ধারিত সময় তা কেনা বন্ধও রাখা যাবে।

পিডিবির তথ্যমতে, ভারতের আমদানিকৃত বিদ্যুতের চেয়ে আদানির কেন্দ্রে খরচ বেশি পড়লেও বাংলাদেশে নির্মিত পায়রা ও রামপালের চেয়ে তা ছিল কম। গত এপ্রিলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে গড়ে ১৮ টাকা ৬৮ পয়সা এবং রামপালে ১৪ টাকা ৮৫ পয়সা। অর্থাৎ পায়রার চেয়ে আদানির বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে পাঁচ টাকা ২১ পয়সা ও রামপালের চেয়ে এক টাকা ৪৮ পয়সা কম পড়েছে।

এদিকে আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরুর পর এপ্রিলে ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ বিল এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কারণ মার্চে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধ করতে হয়েছিল ৫২৩ কোটি টাকা। এপ্রিলে এ বিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯১ কোটি টাকা। তবে আদানির বিল বাবদ আরও ৫৯১ কোটি টাকা যুক্ত হওয়ায় মোট আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০