নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিউট উৎপাদন বাড়াতে না পারায় বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পায়নি বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আসছে অক্টোবরের শেষ দিকে এ প্রতিবন্ধকতা ‘কেটে যেতে পারে’।
সম্প্রতি ভারত ঘুরে আসা এই আওয়ামী লীগ নেতা গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে তার সফরের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা যেটি আশা করেছিলেন, সে অনুযায়ী হয়নি। এ বছরের শেষ দিকে, লাস্ট কোয়ার্টারে, অর্থাৎ অক্টোবরের দিকে টিকা উৎপাদন জোরদার হবে। যেটা তারা আশা করছিলেন, সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারেননি। টিকার ম্যাটেরিয়াল (কাঁচামাল) বিদেশে থেকে আসে, সেগুলো না আসার কারণে তারা টিকা উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আশা করি এ বছরের শেষের দিকে প্রতিবন্ধকতা কেটে যাবে। তখন আমাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সেই টিকা সরবরাহ করা সম্ভবপর হবে।’
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ‘কোভিশিল্ড’ কিনতে গত বছর নভেম্বরে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এরপর জানুয়ারিতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম হিসেবে দেয় সরকার, যা টিকার মোট দামের অর্ধেক।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা ছিল। গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে বাংলাদেশে।
পাশাপাশি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২১ জানুয়ারি আরও ২০ লাখ ডোজ এবং ২৬ মার্চ ১২ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড পেয়েছে বাংলাদেশ।
মার্চে ভারতে কভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করলে সেদেশের সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে সংকটে পড়ে বাংলাদেশ।
পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দিতে হয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা কেনার জন্য সরকার চুক্তি করে। সেই টিকার পাশাপাশি টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসছে এখন। সেই টিকা দিয়েই এখন আবার সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি চলছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ মাসের শুরুতে বলেছিলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়ার ব্যাপারে তিনি ‘এখনও আশাবাদী’। তবে তিনি এও বলেছিলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট যদি টিকা দিতে না পারে, তাহলে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে।
গত সোমবার তিনি দিল্লিতে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন। প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পরদিন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তথ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ‘বাংলাদেশ ওয়ার কমেন্ট্রি’ নামে বইটি লিখেছেন ইউএল বড়ুয়া।
এ সফরে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ‘দূরদর্শনে’ একটি সাক্ষাৎকারও দেন হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ইনফরমেশন ও ব্রডকাস্ট মন্ত্রীর সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক দ্রুত সম্পাদন করে যাতে মুক্তি দেয়া যায় এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ছবি নির্মাণের চুক্তি আছে, সেটি যাতে দ্রুত শুরু করতে পারি।’
আগামী ৭ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ৫০ বছর কীভাবে উদ্যাপন করা হবে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় ছিল বলে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যৌথভাবে কিছু করার পরিকল্পনা দুই দেশের রয়েছে।
ভারতে এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের ‘ক্লিন ফিড’ (যে ভিডিওতে বিদেশি বিজ্ঞাপন থাকবে না) নিয়ে সফরে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পহেলা অক্টোবর থেকে ক্লিন ফিড নিয়ে আইন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে যাচ্ছি, সেই কথাটি ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। কারণ আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশের চ্যানেল দেখানো হচ্ছে, ক্লিন ফিড ছাড়া আইন ভঙ্গ করে সেটি করছে।