শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। গত মৌসুমে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটিতে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। এর জের ধরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। গতকাল থেকে যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বেনাপোল: বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল পেঁয়াজের নতুন চালান প্রবেশ করেছে। গতকাল বিকালে তিনটি ট্রাকে ৯১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। দুটি চালানে এ পেঁয়াজ আমদানি হয়, যার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজ ও মাহি অ্যান্ড মাহিবি এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে হামিদ এন্টারপ্রাইজ ৬৩ টন এবং মাহি অ্যান্ড মাহিবি এন্টারপ্রাইজ ২৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৩৫০ ডলারে।
খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল হামিদ জানান, ভারতে এবার প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। দামও অনেক কম। ছোট একটি এলসি দিয়েছি, যার বিপরীতে ৬৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কোয়ারেন্টাইনের উপসহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার ভারত থেকে ৯১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন জানান, আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ছাড় করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শূন্য শুল্কে এ পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দর দিয়ে খালাস করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ৫৩ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা: গতকাল বেলা ১টা থেকে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে। প্রতি ট্রাকে ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম দিনে ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় ৮৮ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস-বিষয়ক সম্পাদক আমির হামজা জানান, প্রতিটন পেঁয়াজ ৩৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। খুলনার মেসার্স হামিদ এন্টারপ্রাইজ, রাজবাড়ীর মেসার্স ফিরোজ এন্টারপ্রাইজ ও সাতক্ষীরার সোর্স সাইফুল এন্টারপ্রাইজসহ একাধিক আমদানিকারক এ পেঁয়াজ আমদানি করছে।
বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় পর্যন্ত।
হিলি: গতকাল বিকাল থেকে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক প্রবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ আমদানির কার্যক্রম। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার, যার ফলে আটকে যায় হাজার হাজার টন পেঁয়াজের এলসি। এতে ক্ষতির শিকার হয় স্থানীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের।
ভারত সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে আবেদন করেন হিলির পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। এর মধ্যে আট হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজগুলো গতকাল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। গতকাল চারটি ট্রাকে ৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।
উল্লেখ্য, নিজেদের সংকটের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে দেশে পণ্যটির ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। পেঁয়াজের দাম ছাড়িয়ে যায় অতীতের সব রেকর্ড। রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায়।