ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিব্যয় সাত বছরে সর্বোচ্চ

ইসমাইল আলী: ২০১৩-১৪ অর্থবছর প্রথম ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর প্রায় প্রতি বছরই বিদ্যুৎ আমদানি বেড়েছে। আর বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় বাংলাদেশকে। যদিও ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম পড়ত ছয় টাকার কম। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছর এ ব্যয় ছয় টাকা ছাড়িয়ে গেছে, সাত বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এটি ছিল ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সর্বোচ্চ ব্যয়।

যদিও বাংলাদেশের রপ্তানির পাশাপাশি ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও করে ভারত। তবে এক্ষেত্রে ভারতের খরচ পড়ে ইউনিটপ্রতি আড়াই টাকারও কম।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়। সে বছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ২২৬ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ১৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৫০০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ে পাঁচ টাকা ছয় পয়সা।

২০১৪-১৫ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩৭ কোটি ৯৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৯০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৯২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৬২ পয়সা।

২০১৫-১৬ অর্থবছর আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি হয়। সে বছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৯৬৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৮৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ১৫ পয়সা।

পরের অর্থবছর আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো হয়। এতে মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০০ মেগাওয়াট। এতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬৯ কোটি ৪০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় হয় দুই হাজার ৫৯২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৬২৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৫২ পয়সা।

২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি ৭৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় দুই হাজার ৮১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৯৮৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৮৭ পয়সা।

২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ৭১০ মেগাওয়াট বাড়ানো হয়। এতে আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪১০ মেগাওয়াট। সে বছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৭৮ কোটি ৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় হয় তিন হাজার ৭০২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৫৫৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৪৬ পয়সা।

এদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ২৫০ মেগাওয়াট কমানো হয়। এতে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট।

গত অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৫৯ কোটি ৩২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। তবে আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার সাত কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এতে ইউনিটপ্রতি আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা আট পয়সা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড় ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে শুধু ত্রিপুরা কেন্দ্রে পিডিবির লোকসান হয়। তবে আগামী বছর পর্যন্ত এ চুক্তি রয়েছে। এরপর আর তা নবায়ন করার ইচ্ছে নেই। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ রয়েছে। তাই বিদ্যুৎ আমদানি না করলেও একটা খরচ গুনতে হবে। তবে চুক্তির শর্ত থাকায় এগুলো এখনই বাতিল করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে দুই ফেজে যথাক্রমে ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ। এছাড়া সেম্বকপ ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট, পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট ও ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে শুধু এনভিভিএন ২৫০ মেগাওয়াট আমদানিতে ব্যয় পড়ে প্রায় সাড়ে তিন টাকা। বাকি কেন্দ্রগুলোতে গত অর্থবছর ব্যয় পড়েছে ছয় থেকে আট টাকার কাছাকাছি।

পিডিবির তথ্যমতে, প্রথম ২০১৪ সালে জিটুজি ভিত্তিতে এনভিভিএনের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৯ সালে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আর এনভিভিএনের বাকি ৩০০ মেগওয়াট, পিটিসির ২০০ ও সেম্বকপের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালে। এ তিন চুক্তি মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৩ সালে এ তিন চুক্তি শেষ হবে। আর ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হবে ২০২১ সালে।

এদিকে বাংলাদেশে রপ্তানি করলেও ভুটান থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ আমদানি করে ভারত। প্রতি বছর এর পরিমাণ বাড়ছে। যদিও এক্ষেত্রে ভারতের ব্যয় পড়ে বাংলাদেশে রপ্তানির মূল্যের অর্ধেকেরও কম। গত ২৭ আগস্ট দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করপোরেশনের (সাসেক) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘ভুটান’স ইলেকট্রিসি এক্সপোর্ট টু ইন্ডিয়া কান্ট্রিজ টু ইনক্রিজ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুটানের ড্র–ক গ্রিন পাওয়ার করপোরেশন চলতি বছর জানুয়ারি-জুলাই সময়ে ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে ৩৭২ কোটি ৪০ লাখ ইউনিট। এ থেকে ভুটানের আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। এ হিসাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি মূল্য ছিল শূন্য দশমিক ০২৭ ডলার বা ২ টাকা ২৭ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০