Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:27 am

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে ৫২৯৭ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: ভারত থেকে বর্তমানে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। দেশটির সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ছয়টি কেন্দ্র থেকে এসব বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এজন্য মাসে এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়। যদিও ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় এ বিল আরও বেড়ে যাবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়মিত ভর্তুকি ছাড় না করায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে পাঁচ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাস বকেয়া পড়ে গেছে। মার্চের বিল এখনও প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেনি পিডিবি। আর এপ্রিলের বিল জমা দেয়নি ভারতের কোম্পানিগুলো। সেগুলো যোগ করলে বকেয়া বিলের পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যাবে। যদিও বিল পরিশোধে বাংলাদেশের বিলম্বের কারণে ভারত বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।

সূত্রমতে, বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে তিন ফেজে যথাক্রমে ১৬০, ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ। এছাড়া সেম্বকর্প ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট, পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট ও আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ড থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। যদিও ত্রিপুরার কেন্দ্রটি থেকে ৫৬ থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি কেন্দ্রগুলো থেকেও মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৭০০ মেগাওয়াটের ঘরে নেমে যাচ্ছে। শুধু আদানির কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

পিডিবির তথ্যমতে, এনটিপিসির তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে দুটির বিল (১৬০ ও ৩০০ মেগাওয়াট) ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। আর ২৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির বিল জানুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে ত্রিপুরার কেন্দ্রটির বিল বকেয়া রয়েছে ৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও ৩০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির বকেয়া ১৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর এনটিপিসির ২৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির এক মাসের বিল বকেয়া রয়েছে ৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

ভারতের বেসরকারি খাতের পিটিসি ইন্ডিয়ার বিল বকেয়া রয়েছে সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের, যার পরিমাণ ৫৮৬ কোটি সাত লাখ টাকা। সেম্বকর্প ইন্ডিয়ার বিলও বকেয়া সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এছাড়া আদানি পাওয়ারের সেপ্টেম্বরের আংশিক এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের পুরো বিল বকেয়া রয়েছে। কোম্পানিটির বিল মোট বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এদিকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য দেশটির পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তিনটি সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করা হয়। এজন্য মাসে বিল দিতে হয় গড়ে ১৬ থেকে ১৮ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিডের তিনটি সঞ্চালন লাইনের মধ্যে ত্রিপুরা লাইনটির বকেয়া রয়েছে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের। এ বকেয়ার পরিমাণ সাত কোটি ৭২ লাখ টাকা।

বাহরামপুরের দুটি সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আনে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট লাইনের বকেয়া আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসের। এ বকেয়ার পরিমাণ ৪১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বাহরামপুরের অপর লাইনের বকেয়া বিল সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের। এর পরিমাণ ৯৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন সঞ্চালন লাইনের জন্য পাওয়ার গ্রিড ইন্ডিয়ার বিল বকেয়া পড়েছে ১৪৫ কোটি টাকার বেশি।

পিডিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি বরাদ্দ দিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। আবার যেটুকু বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তা নিয়মিত ছাড় করা হচ্ছে না। এতে দেশের সরকারি-বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। আর ভারতের বিলের পুরোটা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই টাকার সাম্প্রতিক রেকর্ড অবমূল্যায়নে আমদানি ব্যয় সোয়া ছয় শতাংশ বেড়ে যাবে। এছাড়া বকেয়া বিলও পরিশোধ করতে হবে ডলারের নতুন রেটে। এতে বকেয়া পরিশোধে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথম জিটুজি ভিত্তিতে এনভিভিএনের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৯ সালে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আর এনভিভিএনের বাকি ৩০০ মেগওয়াট, পিটিসির ২০০ ও সেম্বকর্পের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালে। এ তিন চুক্তির মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৩ সালে এ তিন চুক্তি শেষ হবে।

এনটিপিসির ত্রিপুরা কেন্দ্র থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হয় ২০২১ সালে। পরে তা আরও পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। আর আদানির ঝাড়খণ্ডের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়েছে গত বছর। ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি ২০৪৮ সালে শেষ হবে।