নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ছয় ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগর পরিণত হয় জলের শহরে। গতকাল সকালে কালবৈশাখীর সঙ্গে ভারি বর্ষণে তলিয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। জলাবদ্ধতা নিরসনে সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন হয়েছে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়। এরপর কিছুটা কমলেও সকাল ১০টার দিকে ফের বর্ষণ শুরু হয়। এ ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকা সকাল থেকেই বিদ্যুৎহীন ছিল।
আবহাওয়া অধিদফতরের চট্টগ্রাম কার্যালয় জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ছয় ঘণ্টায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ পাতও ছিল। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও অলিগলিতে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। নিচু এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢোকারও খবর পাওয়া যায়।
পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার মানব পাল জানান, প্রতিবছর বৃষ্টিতে তাদের জলবন্দি হয়ে বাসায় বসে থাকতে হয়। বাসার চারপাশে পানি ও কাদায় একাকার হয়ে থাকে। পাশে খাল থাকার পরও এখানে পানি জমে থাকে। নগরীর চকবাজার এলাকায় রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, চকবাজার, প্রবর্তক, মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকার প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে গাড়ি চলায় অনেক কষ্ট হয়। যাত্রীরা তো বোঝে না। ভাড়া একটু বেশি বললে মারতে চায়। এভাবে কি জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব? চকবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা খোকন জানান, ছুটির দিনে ব্যবসা ভালো হয়। সেই আশায় রাতে বিশ হাজার টাকার সবজি কিনে রেখেছেন। সকালের বৃষ্টিতে সবই শেষ।
অফিসগামী জামশেদুল করিম জানান, মুরাদপুরের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আগ্রাবাদে অফিসে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোমরপানি পাড়ি দিয়ে যেতে পারেননি অফিসে।
আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ জানান, কালবৈশাখীর সঙ্গে ভারি বর্ষণ আজ (শনিবার) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। টানা বৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়েও পানি জমে গেছে। অপরদিকে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন জানান, তাদের মাঠে প্রায় তিন ফুট পানি জমেছে। গ্যারেজ, ফুয়েল রুম, প্রশাসনিক ভবনেও পানি ঢুকেছে। পাশাপাশি মাঠে রাখা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমেও জটিলতা সৃষ্টি হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ১৯৯৫ সালে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পর ১৯৯৭ সালে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে আর কাজ হয়নি। অথচ এ প্ল্যানে নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে উপেক্ষা করা হয়েছে এ প্ল্যানের সুপারিশগুলো। ফলে আজ চট্টগ্রাম শহর জলাবদ্ধতা, যানজট ও বিশৃঙ্খলার শহরে পরিণত হয়েছে। এজন্য নীতি-নির্ধারকদের অবহেলা, অদক্ষতাই মূল কারণ। আর ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাকে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্ণফুলী নদীর তীরে দেয়াল নির্মাণ, ২৫টি খাল ড্রেজিং এবং খালের মুখে পাম্প হাউজসহ সøুইস গেট নির্মাণে ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে কিছু এলাকায় জলজট দেখা দেয়। আগে যদি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে এত ভোগান্তি তৈরি হতো না। আর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা তো দ্রুত সমাধান করা যাবে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাকে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব বরাদ্দ থেকে ৮৯টি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার খাল ও ড্রেন হতে মাটি উত্তোলন ও অপসারণ কার্যক্রম চলছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ সালাম জানান, আগের প্ল্যানে ত্রুটি ছিল ঠিক, কিন্তু শতভাগ তো ত্রুটি ছিল না। এ প্ল্যানে কোথায় খাল করতে হবে কোথায় কী করতে হবে, তার খরচসহ উল্লেখ ছিল। এ প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না।
Add Comment