এম ইদ্রিস আলী, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট রোগ সংক্রমণ করেছে। এতে ধানগাছ পুড়ে যাওয়ার মতো করে শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকার না পেয়ে চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নে নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগের প্রভাবে ক্ষেতের ধানের শীষ আস্তে আস্তে সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার মল্লিকবাড়ী ও ভায়াবহ গ্রামে বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করায় ধানগাছ মরে চিটা হয়ে যাচ্ছে। মল্লিকবাড়ী গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ২০ কাঠা, মেহের আলীর দুই একরসহ বহু কৃষকের ধানের ক্ষেত নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই শেষ চেষ্টা করতে ছুটছেন বাজারে কীটনাশকের দোকানে।
ভায়াবহ গ্রামের কৃষক মুঞ্জুর মিয়া জানান, তার তিন একর জমির সম্পূর্ণ ধান মরে চিটা হয়ে গেছে। কয়েকবার ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হয়নি। এ বছর এক ছটাক ধানও তিনি ঘরে তুলতে পারবেন না বলে আক্ষেপ করেন। তার পাশে খসরু আহম্মেদের এক একর জমি আক্রান্ত হয়েছে। মল্লিকবাড়ী বাজারসংলগ্ন নদীর পূর্ব পাড়ে মাহাম্মদ আলীর প্রায় চার একর জমিতে মহামারী আকারে নেক ব্লাস্ট দেখা দেওয়ায় ক্ষেতের ৮০ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে।
মল্লিকবাড়ী বাজারে এক দোকানে কীটনাশক কিনতে আসা ওই গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন জানান, তিনি ২২ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের বোরো আবাদ করেছেন। তার ধান পাকা শুরু হওয়ার পর নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অর্ধেক জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিটুকুর ফলন ঘরে তুলতে তিনি এক হাজার ২০০ টাকার ওষুধ নিয়েছেন। তিনি ও আরও কয়েকজন অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের কারও সঙ্গে এ পর্যন্ত তাদের দেখা হয়নি।
ভায়াবহ গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রায় দুই একর জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করেছেন। গাছ দেখে মনে হয়েছিল ফলন ভালো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে এই রোগ দেখা দেওয়ায় ধান মরে শেষ হয়ে গেছে। তিনি পাঁচবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো ফল পাননি।
অপরদিকে ওই দোকানে ওষুধ নিতে আসা মল্লিকবাড়ী গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান জানান, তিনি ১৫ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করেছেন। তিনি জমিতে সেমকো কোম্পানির সেলটিমার সঙ্গে কাপ ও জিংক স্প্রে করেছেন তিনবার। চতুর্থবারের জন্য রোববার তিনি সেলটিমা কিনে নিয়েছেন। এছাড়া উপজেলার মল্লিকবাড়ীর লোহাবৈ, ডাকাতিয়ার পাঁচগাঁও, ছিটালপাড়া, হবিরবাড়ীর পাড়াগাঁও গ্রামে কোনো কোনো কৃষকের বোরো ক্ষেতে এই রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
উপসহকারী (মল্লিকবাড়ী ব্লক) কৃষি কর্মকর্তা সিরাজ মিয়া জানান, সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে এ রোগ সারানোর। কিন্তু নদীর কালো পানির জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান, নেক ব্লাস্ট ব্যাপকহারে দেখা দেয়নি। তবে কিছু এলাকায় বিশেষ করে নদীর পাড়ের যেসকল জমিতে কারখানার কালো বর্জ্য পানি নামে, সেসব জমিতে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।