Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:33 am

ভালোবাসা দিবসে ফুলের বাজার নিয়ে শঙ্কায় গদখালীর চাষিরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিশেষ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। বিশেষ এসব দিবসকে টার্গেট করে বছরের অক্টোবর থেকে এ এলাকার ফুলচাষিরা নানা জাতের ফুল লাগানো ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মূলত, ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত। এ সময় ফুলের দাম থাকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। ফুলের ভরা মৌসুম ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবসের পাশাপাশি বিক্রি বেশি হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। কিন্তু করোনাকালে এ বছর ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর চাষি ও ব্যবসায়ীদের তাড়া করছে কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্ক।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কভিডের কারণে গত দু’বছর গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিতে পড়েন। ভরা মৌসুমে চাহিদামতো ফুল বেচতে না পেরে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই নতুন আতঙ্ক ওমিক্রন।

গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর বিশেষ এ দুটি দিবসকে টার্গেট করে সাধ্যমতো ফুলের সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়ে থাকলেও কভিডের প্রভাবের কারণে তা ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

গদখালীর পানিরাসারার ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, গত দুই বছর লকডাউনের কারণে ফুল বিক্রি করতে না পেরে নিঃস্ব হতে চলেছিলেন তারা। এ সময়ে অনেক চাষি ফুলের আবাদ ছেড়ে অন্য ফসলের আবাদও শুরু করেছিলেন। তবে গত জুনের পর থেকে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আমরা পুরোদমে ফের ফুল চাষ শুরু করি। অধিকাংশ কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরোদমে চাষ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ও ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো একটা ব্যবসাও করেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু হঠাৎ কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে সরকারের বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় এরই মধ্যে ফুল ব্যবসার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

ফুলচাষি শের আলী বিশ্বাস বলেন, দেশে ফুলের যে চাহিদা রয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যশোরের গদখালীর চাষিরা জোগান দিয়ে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান, কভিড, অতিবর্ষণসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে এখানকার ফুলচাষিরা ফুল সেক্টরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এ সময়টাকে অতিক্রম করতে অনেককেই ঋণগ্রস্ত হতে হয়েছে। এসব ফুলচাষির সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। তিনি বলেন, এ বছর আমরা মনে করেছিলাম কভিডের ধকল কেটে গেছে, এখন ফুল চাষ করে আবার ঘুরে দাঁড়াব। কিন্তু ফুলের ভরা মৌসুমেই কভিডের নতুন ধরনের কবলে পড়ে আবার ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ফুলচাষিদের। তিনি বলেন, এবার যদি ফুলচাষিরা লোকসান করেন, তাহলে এ সেক্টরের যে ক্ষতি হবে, তা আর কখনও পূরণ হওয়ার মতো নয়।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ফুলের বাজারের যে চাহিদা থাকে তার সঙ্গে দেশের তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশের যোগসূত্র রয়েছে। বিয়ে এবং পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ফুলের ব্যবহার করে তরুণসমাজ। অথচ কভিডের কারণে স্বাস্থ্যবিধির আওতায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এরই মধ্যে ফুলের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও গদখালীর ফুলের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি সরব থাকলেও এখন তা অনেকটা কমে গেছে। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ২১ ফেব্রুয়ারি দুটি দিবসকে ঘিরে আমরা যে ফুল বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছি তা বাস্তবায়িত হবে না। 

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চলতি বছর ঝিকরগাছার গদখালী এলাকায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করা হয়েছে। তবে এ বছর করোনার কারণে বিধিনিষেধ দেয়া হলেও পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকায় ফুল বেচাকেনায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ফুলচাষিরা যাতে নির্বিঘেœ তাদের ফুল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে পারেন, সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।