পুঁজিবাজারকে ভালো অবস্থানে নিতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে। এটা করতে না পারলে পুঁজিবাজারে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা যাবে না। দেশে অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে, যারা এখনও পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিশেষ করে আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপের মোট কোম্পানি রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে মাত্র দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত। বসুন্ধরা একটি বিশাল গ্রুপ। এদের মাত্র একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। পিএইচপি একটি বড় মাপের গ্রুপ। দেশীয় এসব কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং তার সঙ্গে যদি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আনা যায় তাহলে পুঁজিবাজার একটি ভালো অবস্থানে যাবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের
সিনিয়র নিউজ কনসালট্যান্ট রায়হান এম চৌধুরী এবং একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, গত সোমবার পুঁজিবাজারের টার্নওভার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। কারণ মোট টার্নওভার বাড়াতে ৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে ১০টি কোম্পানি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। এসব কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগে থেকেই কিছু ব্যক্তি জেনে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো এই অবস্থানে চলে এসেছে। এখন কথা হচ্ছে, যদি বিএসইসি ও ডিএসই ওইসব কোম্পানির কাছে জানতে চায়, সে ক্ষেত্রে তারা এক কথায় বলে দেবে তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। আসলে এসব গুজবভিত্তিক বিনিয়োগ পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতীতেও হয়েছে এবং বর্তমানেও তা হচ্ছে। এই টার্নওভার দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সামনে নির্বাচন। এখন বিনিয়োগকারীদের সম্পূর্ণ দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
এখানে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, পুঁজিবাজারের যেসব কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। এরা প্রথমে এক থেকে দুই বছর ভালো করে কিন্তু পরে সেভাবে ভালো করতে পারে না এবং একসময় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারী। এখন কথা হচ্ছে, কোম্পানি এরকম অবস্থা হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বিএসইসি ও ডিএসইর। তারা যদি এ বিষয়ে কঠোর বা সচেতন না হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারমুখী করা যাবে না। বাজারে সমস্যা অব্যাহত থাকবে।
আসলে পুঁজিবাজারকে একটি ভালো অবস্থানে নিতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে। ভালো মানের কোম্পানি আনতে না পারলে পুঁজিবাজারে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা যাবে না। দেশে অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে, যারা এখনও পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিশেষ করে আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপের মোট কোম্পানি রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে মাত্র দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত। বসুন্ধরা একটি বিশাল গ্রুপ। এদের মাত্র একটি, পিএইচপি একটি বড় মাপের গ্রুপ। মিউচুয়াল ফান্ডে এদের মাত্র এক থেকে দুটি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দেশীয় এসব কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং তার সঙ্গে যদি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আনা যায়, তাহলে পুঁজিবাজার একটি ভালো অবস্থানে যাবে মনে করি।
পুঁজিবাজার হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আসলে ধৈর্য ধরতে হবে, হতাশ হলে চলবে না। জেনে, শুনে, বুঝে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে লাভ কম হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর যারা গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন তা স্বল্প সময়ের জন্য এবং এখানে দীর্ঘমেয়াদে লোকসানের সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
দেশের জনগণ আশাবাদী, যে সরকারই আসুক না কেন তারা উন্নয়নমূলক ব্যবসায়িক নীতি অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজারও এগিয়ে যাবে। তবে এখানে মূল সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। অতীতেও সুশাসনের অভাব ছিল এবং বর্তমানেও তা রয়ে গেছে। সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়নের ফল সত্যিকার অর্থে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছবে না।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতি পুঁজিবাজারের জন্য দর্পণ হতে পারে না। কারণ দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তার বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। অন্য দেশের দিকে তাকালে এই ধরনের বৈপরীত্য খুব কমই দেখা যায়। কেন এরকম হচ্ছে, এটাই ভাবার বিষয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা জাতিগতভাবে অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ি। সেটি দেশের পুঁজিবাজারেও লক্ষ্য করা যায়। সামনে নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজার এমন অবস্থায় থাকবে কেন। নির্বাচনের পর যে সরকারই আসুক না কেন তারা কেউ চাইবে না পুঁজিবাজারকে পিছিয়ে নিতে। আসলে এখানে গুটিকয়েক ব্যক্তি নির্বাচনের বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারকে অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
জনগণ আশা করে, রাজনীতিবিদরা দেশকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে তাদের প্রতিশ্রুতি ঠিক রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। যদি এই প্রতিশ্রুতি ঠিক থাকে তাহলে ২০১৯ সালে পুঁজিবাজার খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ