বাজারের প্রকৃত বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে রাখা যাদের দায়িত্ব, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না করে ট্রেডিং বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। এখানেই বড় সমস্যা। তাহলে কীভাবে বাজার গতিশীল হবে? কয়েক বছর ধরে বাজারে তারল্য ও আস্থার সংকট চলছে। এখন ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান এবং ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিডেটের ডিরেক্টর ও সাবেক এমডি এ কাদির চৌধুরী।
রকিবুর রহমান বলেন, আসলে এখনও প্রত্যাশিত বাজার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বল্প মূলধনিসহ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে। আমরা বলি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে কিন্তু সেটিও দেখা যাচ্ছে না। বাজারের প্রকৃত বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে। বাজারকে স্থিতিশীল অবস্থানে রাখা যাদের দায়িত্ব বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না করে ট্রেডিং বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। এখানেই বড় সমস্যা। তাহলে কীভাবে বাজার গতিশীল হবে? কয়েক বছর ধরে বাজারে তারল্য ও আস্থার সংকট চলছে। এখন ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। যদি ভালোমানের মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ডসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য থাকত, তাহলে যখন শেয়ারের দর কমে গেলে ওইসব পণ্যে বিনিয়োগ করে বাজার স্থিতিশীল রাখা যেত। যেটা বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারে রয়েছে। এ বাজার তো ৪০০ কোটি টাকা টার্নওভারের নয়। ন্যূনতম টার্নওভার হওয়া উচিত হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত বাজার সংক্রান্ত অনেক নিয়মনীতি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদি নিয়মনীতিগুলো বাস্তবায়ন হতো, তাহলে বাজারের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও অসামঞ্জস্যতা দূর হতো। প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য এক আইন ও স্পন্সরসহ বড় বিনিয়োগকারীর জন্য আরেক আইন প্রভৃতি কারণে যেসব বিনিয়োগকারী চলে গেছেন, তারা আবার ফিরে আসতেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট হলে সেটি দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। বাজারে শেয়ারের দর ওঠানামা, সূচক ওঠানামা এবং কত টার্নওভার হলো, এটি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। তাদের মূল দায়িত্ব যে আইনগুলো করা হয়েছে, সেগুলো বাজারসংশ্লিষ্ট ও কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে পরিপালন করছে কি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বাজারকে কীভাবে ভালো এবং গতিশীল করা যায়। বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারে তেমন ভূমিকা ছিল না। এমনকি যখন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়, তখনও পুঁজিবাজারকে কোনো মূল্যায়ন করা হতো না। পুঁজিবাজার যে অর্থনীতির একটি অংশ সেটি স্বীকার করত না। তবে এখন স্বীকার করছেন। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো এ অবস্থা বিরাজ করছে এবং এত টাকার ঋণখেলাপি হয়েছে।
এ কাদির চৌধুরী বলেন, যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী অর্থাৎ যারা বাজারকে স্থিতিশীল রাখবে, আসলে তাদের হাতে এখন পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না করে ট্রেডিংয়ে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা কেন বিনিয়োগ করবেন, কোনো নিশ্চয়তা কী আছে? বিনিয়োগ করলেই লোকসানে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলোতে সুশাসনের ভয়ানক ঘাটতি রয়েছে। আসলে সুশাসন বলতে যা বোঝায়Ñতা একেবারেই নেই। সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হলে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ