পুঁজিবাজারে ইক্যুইটির সরবরাহ বাড়ছে, কিন্তু চাহিদা বাড়ছে না। ইক্যুইটির সরবরাহ বাড়ার প্রয়োজন থাকলেও তা ভালো মানের হতে হবে। সিএনএ টেক্সটাইলের শেয়ার বিএসইসি অনুমোদন দিয়েছে ১০ টাকায়, তা এখন তিন টাকায়, ফ্যামেলি টেক্সটাইলের শেয়ার ১০ টাকা থেকে এখন তিন টাকায়, এ্যাপোলো ইস্পাতের ২২ টাকায় ইস্যু করা শেয়ার এখন সাত টাকায়। এই যদি হয় কোম্পানির অবস্থা, তাহলে সরবরাহ বাড়িয়ে লাভ কী? এসব কোম্পানি না এনে যদি বহুজাতিক ইউনিলিভার. নেসলে বাংলাদেশ প্রভৃতি কোম্পানি আনা যেত, তাহলে বাজারের গভীরতা বাড়ত এবং বাজারের পুরো চিত্র পরিবর্তিত হয়ে যেত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী, সহসভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুল হক এবং স্কাইপের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন ইনভেস্টরস ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাদের।
মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাজার গতিশীল করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এর পরও বাজারে টানা পতন হচ্ছে। কোনোমতেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যাচ্ছে না। ২০১০ সালে বাজার ধসের পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ বাজারকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নেওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। সেটি না করে ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত থাকে তারা। ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর স্বার্থরক্ষায় তাদের বসানো হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান এক সভায় বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে বাজার ভালো করতে না পারলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। কিন্তু তিন মাসে বাজারের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, বরং বাজারে আরও পতন হচ্ছে। বাজারের এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আহাজারি ও কান্নায় প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বাজার ভালো করার লক্ষ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বল্প ,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ দিলেন। আসলে যেখানে ক্যানসার রোগ, সেখানে ক্যানসারের ওষুধ না দিয়ে প্যারাসিটামল দিলে কাজ করে না।
আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, বাজারের যে অবস্থা তাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। কোনো একটি বিষয়ে যখন আস্থার সংকট দেখা দেয়, তখন সেই সংকট উত্তরণে যে দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকার কথা, সেটিও দেখা না যাওয়ায় আস্থার সংকট তীব্রতর হয়ে উঠছে। ২০১০ সালের পর বাজারে ইক্যুইটির সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কারণ প্রতিবছরই বেশিরভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে অধিক হারে বোনাস শেয়ার ধরিয়ে দিচ্ছে। এটি আসলে কতটুকু যুক্তিসংগত। এখানে বিএসইসির হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বিএসইসি সেটা করছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের প্রতি সবসময় নেতিবাচক। বিশ্বের প্রত্যেকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দেশের পুঁজিবাজারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নেয়। অথচ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা দরকার, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিপরীতমুখী।
মো. সাজ্জাদুল হক বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাজারে দৈনিক টার্নওভার ৯০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা ছিল। যদি বিএসইসি থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট সবাই এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করত, তাহলে বর্তমানে এ অবস্থা হতো না। বাজারে ইক্যুইটির সরবরাহ বাড়ছে, কিন্তু চাহিদা বাড়ছে না। কথা হচ্ছে বাজারে ইক্যুইটি সরবরাহ বাড়ার প্রয়োজন আছে, তবে সেটি হতে হবে ভালো মানের। সিএনএ টেক্সটাইলের শেয়ার বিএসইসি অনুমোদন দিয়েছে ১০ টাকায়, তা এখন তিন টাকা, ফ্যামেলি টেক্সটাইলের শেয়ার ১০ টাকা থেকে এখন তিন টাকা। এ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার ২২ টাকায় ইস্যু করা হয়েছে, তা এখন সাত টাকা। এই যদি হয় কোম্পানির অবস্থা, তাহলে বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে লাভ কী? এসব কোম্পানি না এনে যদি বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার, নেসলে বাংলাদেশ প্রভৃতি কোম্পানিগুলো আনত, তাহলে বাজারের গভীরতা বাড়ত এবং বাজারের পুরো চিত্র পরিবর্তিত হয়ে যেত। কারণ যখন গ্রামীণফোন বাজারে আসে, তখন বাজারের পুরো চিত্রই পরিবর্তিত হয়ে যায়।
স্কাইপের মাধ্যমে এমএ কাদের বলেন, বর্তমানে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের উভয় বিনিয়োগকারী হতাশার মধ্যে রয়েছে। এটা কাম্য নয়। বাজারের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এটা বিএসইসির কাজ। আসলে বিএসইসি কী করে? বর্তমানে বিএসইসির যে ভূমিকা দেখা যাচ্ছে, তা অতীতের চেয়েও ন্যক্কারজনক।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ