ভালো কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীর অভাবে রুগ্ণ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো: ডিবিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় একদিকে যেমন ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারবিমুখ হচ্ছে, অন্যদিকে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগকারীও আকর্ষণ করা যাচ্ছে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) নেতারা বলছেন, এই দুইয়ের চক্করে পড়ে ধুঁকছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলের ডিএসই ভবনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ বছর পুঁজিবাজারে ভালো মানের উল্লেখযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি ভালো কোম্পানি এসেছে মাত্র। বাজারে ভালো কোম্পানি না এলে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না।’

মৌলিভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে না আসার কারণ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সুশাসনের ঘাটতি আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় নতুন করে ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আসতে চাইছে না।’

বাজার নতুন বিনিয়োগকারীও আকর্ষণ করতে পারছে না। গত কয়েক বছরে বিনিয়োগকারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ৩৩ লাখ থেকে ১৭ লাখে নেমেছে।

এর প্রভাবে ৫০ শতাংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এখন রুগ্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীই ৮০ শতাংশ। এখন তারাই বাজারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আস্থা ফেরাতে ডিএসইকে আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে। বিদ্যমান সব নিয়ম ও নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করে বাজারমুখী করার সময় হয়েছে।’

বিনিয়োগকারী আকর্ষণে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় (কালোটাকা) বিনিয়োগের সুযোগ ও নতুন বিনিয়োগকারীদের তিন বছর করমুক্ত ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের মহাধস-পরবর্তী উন্নয়নে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে পৃথক (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) করে আইনি কাঠামো দেয়া হয়। আইন অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের ১৩ পরিচালকদের মধ্যে সাতজনই হবেন স্বতন্ত্র এবং চেয়ারম্যান হবেন স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে থেকে। আর চারজন হবেন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, যারা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মালিক। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সাতজন পরিচালক স্বতন্ত্র হওয়ায় বাজারমুখী অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পরিচালক পর্ষদে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক চারজন থাকায় সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে আসছে না বলে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের পর ১০ বছর পার হয়েছে। এখন আইন হালনাগাদ করা দরকার। পরিচালকদের নিয়োগ দিতে আরও ক্ষমতা দেয়া হোক ডিএসইকে।’

ট্রেডিং কর শতকরা পাঁচ পয়সা থেকে কমিয়ে আড়াই পয়সা করে এই আগাম করকে (এআইটি) চূড়ান্ত কর হিসেবে ধরার প্রস্তাব দিয়েছে ডিবিএ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করতে বাজেটে পথনকশা দেয়ার দাবি করে ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স নির্ধারণের আগে অংশীজন হিসেবে কারও সঙ্গেই আলোচনা করা হয়নি। এতে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা কয়েক জায়গা থেকে আশ্বস্ত হয়েছিলাম, এবার করটি বাসানো হবে না।’

বাজারের ধারাবাহিক পতন নিয়ে ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘যেভাবে বাজার পড়ছে, তার যৌক্তিক কারণ নেই। এমনিতেই অযৌক্তিক কারণে বাজার পড়ছে, নেতিবাচক মনোভাবের কারণে পড়ছে। আমাদের পুঁজিবাজার প্রায় চার বছর খরার মধ্যে যাচ্ছে। উত্তরণের চেষ্টা করেও হচ্ছে না। একটা গণজাগরণের সৃষ্টি না হলে এই জায়গা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আমরা রুগ্ণ হয়ে যাচ্ছি, হয়ে গেছি। তাহলে বাজারের হাল ধরবে কে? এর জন্য আমাদের নীতি-সহায়তা দরকার।’

এই নীতি সহায়তা আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা মার্জিন লসের কারণে অসংখ্য বিনিয়োগ অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, যা তারল্য সংকটের মুখে গত কয়েক বছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে। মার্জিন ঋণের ওপর থেকে করা তুলে নেয়ার দাবি করছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০