নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরই আরও ভালো কিছু কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। ভালো কোম্পানি আনতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের আগে সবকিছু জানানো সম্ভব হয় না। কিন্তু তারপরও বলছি, কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্তি হতে যাচ্ছে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে ফারস হোটেলে আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে অনলাইন নিউজপোর্টাল বিজনেস আওয়ার২৪ ডটকম।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কোনো মিল নেই। এ জন্য তিনটি কারণ দায়ী। কিন্তু মূল প্রবন্ধে উল্লিখিত কারণগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অতিথিরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যখন ধস নামে তখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। এরপর থেকে অর্থনীতির অনেক উন্নয়ন হলেও পুঁজিবাজারের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। কোনো কোম্পানিকে জোর করে পুঁজিবাজারে আনা ঠিক হবে না। তাদের বুঝিয়ে এখানে আনতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাটাই করেছি। আসা করছি পরবর্তী কোয়াটার থেকেই এর একটা সুফল দেখতে পাবেন। আপনারা যে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে প্রত্যাশা করছেন, তাদের শিগগিরই দেখতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা এসএমই সেক্টরে এতদিন গুরুত্ব দিতাম না। এখন আমরা এসএমইর জন্য আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছি। এখানে লিস্টিং হওয়ার মাধ্যমে তারা করপোরেট আচার-আচরণ শিখতে পারছে। পরবর্তী সময়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে এখান থেকেই তারা মূল মার্কেটে আসতে পারবে। আমরা এখনই তাদের এ সুযোগটা দিচ্ছি।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো কেন আসবে? ব্যাংক খাতে আমানত না রেখে কেন আসবে? একটা ভালো কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংক যেখানে মুখিয়ে আছে, সেখানে পুঁজিবাজারের মতো এত বাধাগ্রস্ত জায়গায় কেন আসবে? এখানে আমার মনে হয় ব্যাংক খাতে তাদের জন্য যতদিনে সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেয়া না হবে, ততদিন তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না। তাছাড়া পুঁজিবাজারে আসতে নানা ধরনের আইনি জটিলতা পেরিয়েই তাদের এখানে লিস্টেড হতে হয়। এই জায়গাটাকে সহজ করতে হবে। ভালো কোম্পানিগুলোকে আনতে সহজ ও উপযোগী রাস্তা করে দিতে হবে। তাহলেই তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শতচেষ্টা করেও বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারছি না। সে ক্ষেত্রে তাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করাটাও হয়তো ঠিক হবে না। কেননা, এই চাপ প্রয়োগে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আরও অনাগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। জোর করে এদের আনা যাবে না, বরং তাদের বুঝিয়ে এখানে আনার চেষ্টা করতে হবে।
বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া ছাড়া কোনো খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেউ যদি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে, তারপর কেন সে তার প্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে একজন ব্যবসায়িক পার্টনার (বিনিয়োগকারী) হিসেবে নেবে। যদি ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাবাজারে আনতে হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।