মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আইসিএমএবির সিনিয়র ফেলো মেম্বার ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি। বতর্মানে তিনি আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী ও চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি, যার সারাংশ পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো
শেয়ার বিজ: বর্তমানে বার্ষিক বিও রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এটাকে বেশি মনে করে। এটা কমানো যায় কি না?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি। আইপিওতে আবেদন করতে হলে ৫০ হাজার টাকার যে সীমা আছে, এদের যদি আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ধরি। তবে এরা ৫০ হাজার টাকায় কত লভ্যাংশ পেতে পারে? মনে করি, ৪ শতাংশ ইল্ড ধরে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশ হবে দুই হাজার টাকা। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স বাদ দিয়ে তিনি এক হাজার ৭৮০ টাকা পাবেন। এক হাজার ৭৮০ টাকা আয়ের উপর মেইনটেইন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা দিতে হয়। আমি মনে করি এটা বেশি। প্রথমে শুরুর ক্ষেত্রে মেইনটেইন্যান্স অ্যামাউন্টটি ফিক্সড ছিল না। এটা বিনিয়োগের হারের ওপর ভিত্তি করে নেয়া হয়। এখন সবার জন্য সমান। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি কমানো যেতে পারে। বিও মেইনটেন্যোন্স ফি’র মধ্যে কমিশন পাওয়া যায় ৫০ টাকা। কমিশনের আসলে বিও’র ব্যাপারে কোনো কাজ করতে হয় না। ব্রোকারেজ হাউস ও সিডিবিএলকে এর বেশ কাজ করতে হয়। তবে আমার মনে হয়, এটি কমানো গেলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হবে।
শেয়ার বিজ: ২০২৩ সালে মাত্র ছয়টি কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে ৬৪১ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর কারণ কী হতে পারে?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ২০২৩ সালে পুঁজিবাজার খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। বাজারে তারল্য সংকট বেশি ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে গেছে। সেজন্য আমি বলব, পুঁজিবাজারে মূলধন উত্তোলনের জন্য ২০২৩ সময়টা অনুকূল ছিল না। সকলে আশা করেছিল, ভবিষ্যতে ভালো সময় আসবে। তাছাড়া যারা সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাজার বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে, এই সময় মূলধন উত্তোলন কঠিন হবে। যেমন বর্তমানে বেস্ট হোল্ডিং বড় সাইজের আইপিওতে এসে তারা পলিসি পরিবর্তন করিয়ে নিয়েছে। ১০ হাজার টাকা এবং এর গুণিতক, সর্বাধিক ১৫ লাখ টাকার আবেদন করতে পারবে। এতে বোঝা যায়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা ছিল, তাই অনেকে আসেনি। তবে ভালো কোনো কোম্পানি যেমন আকিজ গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপের কোনো কোম্পানি বাজারে এলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।
শেয়ার বিজ: বিনিয়োগকারীরা আগে বেশি দামে শেয়ার কিনেছিল, বর্তমানে কম দামে একই শেয়ার কিনে ক্রয়মূল্য অ্যাভারেজ করছে। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: অ্যাভারেজিং কনসেপ্টটা পুঁজিবাজারের চলিত নিয়ম। আমি ব্যাক্তিগতভাবে অ্যাভারেজের পক্ষে, তবে সিলেকটিভ হওয়া উচিত। এর মানে আমি যদি ভালো কোম্পানির শেয়ার ভুলে বেশি দামে কিনে ফেলি, সেটা অ্যাভারেজ করা যেতে পারে। কিন্তু যদি খারাপ কোম্পানির শেয়ার বেশি দামে ক্রয় করে থাকি, সেটা অ্যাভারেজ করা ঠিক নয়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
শেয়ার বিজ: আমাদের তরুণ প্রজন্ম শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে পেশা হিসেবে নিতে পারে কি না?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমাদের দেশে পেশার সংজ্ঞাটাই অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। পেশা হিসেবে নেয়া মানে আমি আর কিছু করব না, এক কাজে আমার সব সময় ও অর্থ ব্যয় করব। তবে পুঁজিবাজারে পেশাদার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে অবশ্যই পুঁজিবাজার সম্পর্কে পড়াশোনা করা লাগবে। আমাদের দেশে যারা আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তারা পাস করার পর আইনজীবীর অধীনে যাবতীয় বিষয় প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর পেশাদার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পুঁজিবাজারকেও পেশা হিসেবে নেয়ার সুযোগ আছে, তবে আগ্রহী ব্যক্তিকে এ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। বিআইসিএমের অনেক সার্টিফিকেট কোর্স আছে, সেখানে পড়াশোনা করতে পারেন। ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মূলধনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে পেশা হিসেবে নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। এছাড়া বাকিরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে তাদের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে নিতে পারেন। তবে নিজের আয়ের প্রধান উৎস ছেড়ে মাত্র পাঁচ-দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজারকে পেশা হিসেবে নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
শেয়ার বিজ: সম্প্রতি বিএসইসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক অ্যাসেট ম্যানেজারকে প্রতি তিন বছরে একটি মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে আনতে হবে। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: বিএসইসির নতুন নির্দেশনা অনুসারে সম্ভবত তাদের কাছে ভালো তথ্য আছে, যা আমাদের কাছে নেই। আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশে যেসব লিস্টেড কোম্পানি আছে, এগুলোকে মিউচুয়াল ফান্ডের নিয়মকানুন, রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করে পর্যাপ্তসংখ্যক ইক্যুইটি পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে যাবে। এছাড়া বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের নিয়ম হচ্ছে তারা ইক্যুইটিতে ইনভেস্ট করবে। অ্যাসেট ম্যানেজারদের ওপর মিউচুয়াল ফান্ড আনার বাধ্যবাধকতা করার আগে আমাদের উচিত বাজারে ভালো কোম্পানি লিস্টেড করা। যদি আগামী পাঁচ বছরে ২০-৩০টি ভালো কোম্পানি বড় পেইড-আপ ক্যাপিটাল নিয়ে লিস্টেড হয়, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যাপারে যে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটা ফলপ্রসূ হবে। আমাদের ইক্যুইটি মার্কেটে ভালো আইপিও না এনে মিউচুয়াল ফান্ডের সব ধরনের বাধ্যবাধকতা ভালো ফল দেবে না।
শেয়ার বিজ: বহির্বিশ্বে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে দু–তিন কর্মদিবস সময় দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে পাঁচ কর্মদিবস দেয়া হয়। এটা কমানো যায় কি না?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: বিষয়টি নিয়ে বহুদিন যাবৎ আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু আইপিওতে আবেদন শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়ে থাকে, সেহেতু আবেদনের জন্য পাঁচ কর্মদিবস সময় রাখার কোনো মানে আমি খুঁজে পাই না। পুঁজিবাজারে যারা প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট দেয়, এক দিনে তাদের আইপিও সাবস্ক্রিপশন সাপোর্ট প্রদান করা মুশকিল। আইপিও’র পুরো প্রসেস রিভিউ করা দরকার। আবেদনের জন্য দু-তিন দিন, শেয়ার বরাদ্দের জন্য চার-পাঁচ দিন এবং ট্রেডিংয়ের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ থেকে ১৫ দিন বেঁধে দেয়া যায়। এতে বাজারে লিকুইডিটি বাড়বে।
শেয়ার বিজ: দেশের বড় নামিদামি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে চাচ্ছে না। এই কোম্পানিগুলোকে কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: বর্তমানে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। সরকারি সেক্টরে যেসব লাভজনক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে বলেছিলাম। আর দুর্ভাগ্যবশত আগের অর্থমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, ‘সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে নিয়ে আসবেন।’ কিন্তু সেটা ফলপ্রসূ হয়নি। তার পরবর্তী অর্থমন্ত্রী তিনিও আসার পরে কথা দিয়েছেন, তবে এটাও বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে আমাদের আশা, নতুন অর্থমন্ত্রী এটি পূরণ করবেন। এছাড়া বড় বড় গ্রুপ বা কোম্পানি যারা জনগণকে বিশাল পণ্য ও সেবা দিচ্ছে, যেমন আকিজ গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, টিকে গ্রুপ এদের একাধিক কোম্পানি আছে। কিন্তু এদের একটি কোম্পানিও পুঁজিবাজারে নেই। এদের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংককে দায়িত্ব দিলে সম্ভবত তারা এটি করতে সক্ষম হবে না। এগুলোর জন্য কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর একসঙ্গে এদের ডেকে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে, এদের বাজারে আনা যেতে পারে। তবে মূল্য নিয়ে একটা প্রশ্ন ওঠে। এদের শেয়ার কী দামে বাজারে আসবে? আমি এসব কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সাজেস্ট করছি না। তারা ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে আসতে পারে। আমরা জানি স্কয়ার টেক্সটাইল ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসে। তাদের বেস প্রাইস দেয়া হয়েছিল সম্ভবত ১৩ টাকা। এই শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ১৩-২৭ টাকায় কিনেছি। বাজার যেভাবে নেয় সেভাবে তারা টাকা পাবে। এভাবে কোম্পানিগুলোকে ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে ছাড় দিলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহ পাবে। আর আইপিওর যে চলমান প্রথা আছে, সেভাবে হলে ভালো কোম্পানি বাজারে আসবে না।
শেয়ার বিজ: পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা কি শরিয়াহসম্মত?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: মুসলমানরা খাওয়ার ব্যাপারে হালাল-হারাম দেখে খায়। শূকরের মাংস হারাম, তাই মুসলমানরা খায় না। তবে ইন্টারেস্টকে এড়িয়ে চলে এমন মানুষ নেই। ইন্টারেস্ট হারাম, এটা আমাদের মাথার মধ্যেও নেই। সবাই ভাবে ইন্টারেস্ট ছাড়া ইকোনমি চলবে কীভাবে? কিন্তু ইন্টারেস্ট ছাড়া ইকোনমি চলতে পারে, চালানো যায় এর অনেক নজির আছে। অনেক আলেম বলে থাকেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হারাম। কিন্তু এটা তারা না বুঝে বলে থাকেন। শরিয়াহ মোতাবেক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। আমাদের সিএসই ও ডিএসই’তে শরিয়াহভিত্তিক ইনডেক্স আছে। শরিয়াহভিত্তিক ইন্ডেক্সভুক্ত কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ করা শরিয়াহসম্মত। মানুষ ইন্টারেস্ট নিতে চায় না বলেই ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের এত প্রসার হচ্ছে। এখন প্রায় সব ব্যাংকই ইসলামিক ব্যাংকিং সুবিধা চালু করছে। শরিয়াহ ইনডেক্সের কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ এখন পর্যন্ত বাজারজাত করার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়ার্কশপ ও সেমিনারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালাতে পারে। আমাদের মতো ছোট ব্রোকার হাউসগুলো এ ব্যাপারে চেষ্টা করছে। স্টক এক্সচেঞ্জে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হলে তাহলে মানুষ শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ নিয়ে আরও সহজভাবে বুঝতে পারবে। পুঁজিবাজারে শরিয়াহসম্মত বিনিয়োগের সুযোগ আছে।
শেয়ার বিজ: ডলারের বাজারের অস্থিরতা পুঁজিবাজারকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ডলার বাজারের অস্থিরতা বাজারকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা একটি ম্যাক্রো-ইকোনমিক ফ্যাক্টর। ডলারের বিনিময়ে টাকা এক্সচেঞ্জ রেট কোথায় গিয়ে থামবে, সেটায় অনিশ্চয়তা থাকায় বিদেশিরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে না। আমাদের দেশে যেসব বড় বড় লিস্টেড কোম্পানি আছে, এদের অনেকেই ডলার সংকটে থাকায় ঠিকমতো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এক্সচেঞ্জ রেটের জন্য তেলের দাম বেড়ে গেছে, যার ফলে সরকার তেলের দর বাড়িয়েছে এবং সবার উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পুঁজিবাজারে একটা বড় খারাপ প্রভাব পড়েছে। এতে এককভাবে কোম্পানিগুলোর কিছু করার নেই। তবে সরকারের করণীয় আছে। সরকারের ফিস্ক্যাল ম্যানেজমেন্ট যদি সময় উপযোগী করা না হয়, তাহলে ডলারের এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে। এতে পুঁজিবাজারের লিস্টেড কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এদের আয় ও ইপিএস কমে যাবে। সেজন্য আমরা চাচ্ছি, ডলারের রেটটা যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়। যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদের দিকে তাকাতে হবে। তাদের সমুদয় আয় যেন ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। একসময় আমি বলেছিলাম, প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা পাঠাচ্ছেনÑপাসপোর্ট নবায়ন করার সময় এ তথ্যটা চাওয়া যেতে পারে। এ রকম ব্যবস্থা করা হলে যারা হুন্ডি বা অন্য যেসব অবৈধ মাধ্যমে টাকা পাঠান, তাদের টাকাও বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসবে। এছাড়া মুদ্রাপাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যদি কঠিন শাস্তির আওতায় আনা যায়, তবে আমাদের দেশে ডলারের এই সংকট অনেকাংশে কমে আসবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে। ডলার সংকট পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
শেয়ার বিজ: ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তনের ফলে লিস্টেড ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় কী ধরনের সুফল আশা করছেন?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ইতিবাচক ফলের আশায় নিয়ন্ত্রকরা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যেও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। যাদের ডিফল্ট লোন পাঁচ শতাংশের বেশি তারা এই সেবা দিতে পারবে না। আমি আগেও বলেছি, আমাদের দেশে এত ব্যাংকের দরকার নেই, এমনকি এত বিমা কোম্পানিরও প্রয়োজন নেই। এত ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি চালানোর মতো দক্ষ জনবল আমাদের দেশে নেই। আমাদের ইকোনমিক সাইজ এতগুলো ব্যাংক-বিমা কোম্পানি সাপোর্ট করে না। ভারতের ব্যাংকাস্যুরেন্স অভিজ্ঞতা মোতাবেক তারা বলে ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে লেনদেন হলে বিমার ব্যবসা বাড়ছে। আমরা মনে করি বাড়বে, তবে বড় পরিসরে বাড়বে না। সামান্য কিছু বাড়লেও একটি জায়গায় গিয়ে এই প্রবাহ থেমে থাকবে। আমাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি, জিডিপি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন যদি সম্প্রসারিত হয়, তবে ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ব্যবসা এমনিতেই ভালো হবে। ভালো ম্যানাজমেন্ট আছে, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে তারা এই অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে পারলেই তাদের ব্যাবসা বাড়বে। যাদের এসব দিকে দুর্বলতা আছে, তারা পারবে না। তাই গড়ে সব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যাবসা ভালো হবে, এটা বলা যায় না।
শেয়ার বিজ: বড় আকারের রেমিট্যান্স আসছে ব্যাংকিং চ্যানেল এড়িয়ে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: রেমিট্যান্স কম আসা ও মানি লন্ডারিং বাড়ার মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। মুদ্রাপাচার যে হারে বাড়ছে, সে হারে রেমিট্যান্স আসা কমছে। মাঝখান থেকে কারা এই রেমিট্যান্সগুলো শিকার করছে? কারা সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অস্থায়ী বাজার বসাচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা সরকারের পক্ষে সহজ। এদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা কিনছেন তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত, আবার যারা টাকা বাইরে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন; তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তাদের শাস্তিস্বরূপ নাগরিকত্ব বাতিল ও ব্যবসায়িক অনুমতি বাতিল করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। অনেক প্রবাসী বিদেশে আছেন, আবার প্রতিবছর অনেকেই প্রবাসে যাচ্ছেন। তাহলে ওই পরিমাণ রেমিট্যান্স কোথায়? এ বিষয়ে সবাই জেনেও চুপ করে আছে। চুপ করে থাকলে সমস্যা বাড়বে। এছাড়া বিদেশে শ্রমবাজার ধরার বিষয়ে আমাদের সরকারি প্রচেষ্টা আরও জোরালোভাবে করা উচিত। বিদেশে গিয়ে কেউ যাতে প্রতারিত না হয়, সেদিকে সরকারের দেখা উচিত। এতে করে বিদেশে গিয়ে প্রতারণা অথবা হয়রানির শিকার হতে প্রবাসীদের রক্ষা করা যাবে। এতে দেশের রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাবে। দেশে রেমিট্যান্স কী পরিমাণ আসছে, এর জন্য প্রতি মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত। বার্ষিক মাথাপিছু কত রেমি